প্রতীকী ছবি।
এক সময়ে তাঁরা ছিলেন ‘সতীর্থ’। কিন্তু এক জন দল পাল্টানোর পরে, গত বিধানসভা তাঁদের দেখা গিয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায়। খণ্ডঘোষ বিধানসভা কেন্দ্রে এ বারও লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূলের নবীনচন্দ্র বাগ ও সিপিএমের অসীমা রায়। লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া ভোটের দিকে তাকিয়ে তাল ঠুকছেন বিজেপির শিক্ষক নেতা বিজন মণ্ডলও।
প্রতীকই শেষ কথা— এক সময়ে খণ্ডঘোষে বামপন্থীদের এটাই ছিল স্লোগান। কংগ্রেস জমানাতেও এই কেন্দ্রে বাম প্রার্থীরা দু’বার জিতেছিলেন। ১৯৭৭ সালের পরে, দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সিপিএমের জেতার ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার। ২০১১ সালে, রাজ্যে পালাবদলের বছরেও খণ্ডঘোষে লাল পতাকা উড়েছিল। সে বার ৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জেতেন সিপিএম প্রার্থী নবীনচন্দ্র বাগ। তিনিই দল পাল্টে ২০১৬ সালে তৃণমূলের প্রার্থী হন। সে বার ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন তিনি। মাত্র দু’শতাংশের মতো ভোট কম পেয়ে হেরে যান সিপিএম প্রার্থী অসীমাদেবী। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে খণ্ডঘোষের একটি জেলা পরিষদ আসন ছাড়া, সব আসন ছিল ‘বিরোধীহীন’। গত লোকসভা ভোটে বামেদের সরিয়ে, ২০১৬-র তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ ভোট বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি।
নবীনবাবু ও অসীমাদেবী, দু’জনই এলাকার মানুষ। পুরনো মাঠে খেলতে নেমেছেন তাঁরা। টক্কর দিতে হাজির লাগোয়া রায়নার বাসিন্দা, খণ্ডঘোষ স্কুলের শিক্ষক, বিজেপি প্রার্থী বিজনবাবু। খণ্ডঘোষ ব্লকের ১০টি এবং গলসি ২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্র। এলাকাবাসীর অনেকের দাবি, একই বিধানসভার মধ্যে হলেও এই দুই ব্লকের মধ্যে যোগাযোগ এক প্রকার বিচ্ছিন্ন। এই দু’টি ব্লককে ভাগ করেছে দামোদর নদ, বাঁকা নদী ও ডিভিসির মূল সেচখাল। এ ছাড়া, এলাকা ঘেঁষে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর নদ। মূলত কৃষির উপরে নির্ভরশীল এই এলাকায় ৩৫টি ইটভাটা ও গোটা পঞ্চাশ চালকল রয়েছে। কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কৃষকদের একাংশের দাবি, নদ-নদী, সেচখাল থাকলেও জলের অভাবে চাষ মার খাচ্ছে। দুই ব্লকেই বোরো চাষের এলাকা কমেছে। তাঁদের আরও ক্ষোভ, নদীর পাড় বরাবর একটি বড় অংশ জুড়ে আলু চাষ হত। ভাঙনের জন্য তা বন্ধ হতে বসেছে। বালির গাড়ি যাতায়াতের ফলে, বিভিন্ন এলাকার রাস্তা খারাপ হচ্ছে বলেও এলাকাবাসীর ক্ষোভ রয়েছে।
তবে এ সব ছাড়িয়ে বাম বা তৃণমূল— দু’টি জমানাতেই বিরোধীদের প্রচারের মূল হাতিয়ার ‘সন্ত্রাস’ ও ‘দুর্নীতি’। কখনও বিরোধীদের ভোট দিতে বাধা, আবার কোথাও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ— বিভিন্ন সময়েই এই অভিযোগ উঠেছে। ভোট ঘিরে খুন-জখম লেগেই থাকে। একশো দিনের কাজের বরাদ্দ নিয়ে গরমিলের অভিযোগ ওঠার পরে খণ্ডঘোষে তৃণমূল পরিচালিত একটি পঞ্চায়েতকে টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের নামে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, হিংসা, চাপা সন্ত্রাস ও দুর্নীতির আবহাওয়া থেকে খণ্ডঘোষ বেরোতে পারেনি।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের অভিযোগ, “বালি লুট, একশো দিনের কাজে দুর্নীতি আর সন্ত্রাস— এ নিয়েই তৃণমূল। তার দোসর বিজেপি। সে কথাই মানুষের কাছে তুলে ধরে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আর্জি জানানো হচ্ছে।’’ বিজেপি প্রার্থী বিজন মণ্ডলেরও দাবি, ‘‘খণ্ডঘোষের মানুষ দিন-রাত চাপা সন্ত্রাস অনুভব করেন। গণতন্ত্র নেই, কাজের পরিবেশ নেই, উন্নয়নও নেই।’’ যদিও এ সব মানতে নারাজ তৃণমূল প্রার্থী নবীনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল আমলে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। এক দিকে গণতন্ত্র, আর এক দিকে উন্নয়নকে সামনে রেখে আমরা প্রচার করছি। সবার উপরে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ তাঁকে দেখেই ভোট দেবেন।’’