প্রদীপ মজুমদার (তৃণমূল), দীপ্তাংশু চৌধুরী (বিজেপি) এবং আভাস রায়চৌধুরী (সিপিএম)।
এই বিধানসভা কেন্দ্রে শহর-গ্রাম, দু’ই-ই রয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুর পূর্বের জমিতে এ বারে ভোটের মূল বিষয়, শিল্পায়ন ও ‘বহিরাগত-কাঁটা’, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। পাশাপাশি, এই বিধানসভা কেন্দ্রের তিন প্রধান দলের প্রার্থীই ‘বহিরাগত’। এই বিষয়টিও ভোট-চর্চায় ভাসছে এলাকায়।
ডিএসপি টাউনশিপের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড, অভিজাত বিধাননগর, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি, এইচএফসিএল ও বিওজিএল টাউনশিপের ২৩-২৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং কাঁকসা ব্লকের গোপালপুর, মলানদিঘি ও আমলাজোড়া পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি এই কেন্দ্র। পুর-এলাকায় তৃণমূলের বোর্ড। তিনটি পঞ্চায়েত, আমলাজোড়া ও মলানদিঘির চারটি কৃষি সমবায়ও তৃণমূলের দখলে। অর্থাৎ, খাতায়-কলমে সর্বত্র ঘাসফুল। তবে ২০১৬-র বিধানসভায় সিপিএম এবং ২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপি এই বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। পাশাপাশি, ২০১৬-র তুলনায় ২০১৯-এর লোকসভায় এই আসনে তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেসের ভোট কমেছিল যথাক্রমে ১২ হাজার ও ৫০ হাজার। উল্টো দিকে, বিজেপির ভোটপ্রাপ্তি বেড়েছিল ৬৭,১৫৩। অর্থাৎ, জেতা আসনেও প্রবল রক্তক্ষরণ ঘটেছিল বাম-কংগ্রেসের। এ বার এই আসনে সিপিএম, বিজেপি ও তৃণমূলের হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন যথাক্রমে আভাস রায়চৌধুরী, দীপ্তাংশু চৌধুরী এবং প্রদীপ মজুমদার।
এই কেন্দ্রের মূল বিষয় যেন শিল্পায়ন। বামুনাড়া, বাঁশকোপা, খয়রাশোল ও লেনিন সরণি শিল্পতালুকে গত দশ বছরে একটিও নতুন কারখানা তৈরি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রচার করছেন সিপিএম প্রার্থী আভাসবাবু ও বিজেপি প্রার্থী দীপ্তাংশুবাবু। এ-ও অভিযোগ করছেন, প্রায় ২০টি কারখানা বন্ধ। পাশাপাশি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অতীতে অর্থের বিনিময়ে কারখানায় লোক নিয়োগ করানোর মতো অভিযোগও উঠেছিল। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি। এ দিকে, তৃণমূল ও সিপিএমের প্রচারে চড়া সুরে আসছে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি, এইচএফসিএল এখনও না খোলার প্রসঙ্গটি। তবে বিজেপি প্রচারে মূলত গুরুত্ব পাচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান ও বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার মতো নাগরিক পরিষেবার বিষয়গুলি।
ওই তিন প্রার্থীই ‘বহিরাগত’। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের আঁচও দেখা গিয়েছে। ২০১৬-তেও এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রদীপবাবু দুর্গাপুরে তৃণমূলের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গেই প্রচার চালিয়েছিলেন। এ বার তেমনটা হয়নি— এমনই পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। এ দিকে, আভাসবাবু বর্ধমানের বাসিন্দা হওয়ায় এবং দুর্গাপুরের এই বিস্তীর্ণ শ্রম-ক্ষেত্রের সঙ্গে তাঁর সে ভাবে যোগাযোগ না থাকায় মুখে তাঁকে ‘যোগ্য প্রার্থী’ বললেও সিপিএম সমর্থকদের একটি অংশকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হতে দেখা গিয়েছে। তবে প্রদীপবাবু ও আভাসবাবু, দু’জনেই এ সব কথা স্বীকার করেননি। পাশাপাশি, দীপ্তাংশুবাবুর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরেই বিজেপির একটি অংশকে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝোলানো, ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করার দাবি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি দেওয়ার মতো কাজকর্ম করতে দেখা গিয়েছে। অমিতাভবাবু এবং তাঁর অনুগামী বলে পরিচিতদের এখনও সে ভাবে প্রচারেও নামতে দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি। দীপ্তাংশুবাবুর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, ‘‘দু’-এক জন হয়তো এখনও দূরে রয়েছেন। কিন্তু সঙ্গে রয়েছেন হাজার-হাজার দলীয় কর্মী।’’ প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’ ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে এ বার ‘রক্তক্ষরণ’ বন্ধ হবে বলেই আশা অভাসবাবুর। এই ‘আশাবাদ’ কেন? সে সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা মানুষ বুঝছেন।’’