West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls : শান্তি চায় আমডাঙা

এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান, সহিদুল আলিদের মতে, যে-ই জিতুক না কেন, রাজনৈতিক হিংসা যেন বন্ধ হয়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২৭
Share:

রফিকুর রহমান, জয়দেব মান্না এবং জামালউদ্দিন ।

রক্তপাত বন্ধ হোক, চাইছেন আমডাঙার মানুষ।

Advertisement

রাজ্যে গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে রাজনৈতিক হিংসার একের পর এক ঘটনা ঘটেছে এখানে। মৃত্যু হয়েছে। লোকসভা ভোটেও হিংসা অব্যাহত ছিল। এ বার বিধানসভা ভোটের আগেও রাজনৈতিক সংর্ঘষের ঘটনায় বার বার উত্তপ্ত হয়েছে আমডাঙার মাটি। মানুষ চাইছেন, হিংসা, হানাহানি বন্ধ করে এলাকার উন্নয়নে নজর দিক দলগুলি।

আমডাঙার ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তারাবেড়িয়া এবং বোদাইয়ে এখনও বোর্ড গঠন হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতিতে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন হয়নি। আর এ সবের ফলে মানুষ দৈনিন্দন নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। এলাকায় ঘুরে জানা গেল, আর্সেনিকমুক্ত পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। অনেক মানুষ টাকা দিয়ে পানীয় জল কিনে খান। বিভিন্ন এলাকায় সরকারি গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। বেশ কিছু এলাকায় পানীয় জলের পাইপ পর্যন্ত পৌঁছয়নি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বেহাল, যান চলাচলের অনুপযুক্ত। কৃষিপ্রধান এলাকায় চাষিদের হাটে-বাজারে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়।

Advertisement

আমডাঙা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত নয় বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের অভিজ্ঞতা, হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলেই ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। নিকাশি নিয়েও হাজারো অভিযোগ। ভারী বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় জল জমে যায়। এলাকার হাট-বাজারের পরিকাঠামো উন্নত নয়। আজও থমকে আছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ।

যদিও বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূলের প্রার্থী রফিকুল রহমান বলেন, ‘‘কলেজে ৬ কোটি টাকা দিয়ে ভবন করেছি। ৫ কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতালের উন্নয়ন করেছি। ১০০ কিলোমিটারের বেশি পিচের রাস্তা এবং অসংখ্য ঢালাই রাস্তা করেছি। এলাকার মানুষ চোখের সামনে এ সব দেখেছেন।’’

আমডাঙার দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বাম জমানার মন্ত্রী মোর্তজা হোসেনের নাম ঘোষণা করেছিলেন। প্রার্থী ঘোষণার পরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বড় অংশের কর্মীরা বসে গিয়েছিলেন। পরে প্রার্থী হিসেবে রফিকুর রহমানের নাম ঘোষণা হয়। প্রচারে গতি আসে।

লোকসভা ভোটে এই আসনে তৃণমূল ৩৬,৫৬৬ ভোটে এগিয়ে ছিল। সেই পরিসংখ্যান ভরসা জোগাচ্ছে রফিকুলকে। তিনি গত দু’বারের বিধায়ক। গত দশ বছরে এলাকার উন্নয়নের কথা বলেই প্রচার করছেন।

অতীতে একটা সময় সিপিএম তথা বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল এই বিধানসভা। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাঁদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। লোকসভা ভোটে এখানে বামেদের সরিয়ে বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বামেরা পেয়েছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট। গত লোকসভা ভোটে সেই ভোট নেমে এসেছে মাত্র ১৩ শতাংশে। এখানে এ বার সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী হয়েছেন জামালউদ্দিন। সভা-মিছিলে জমায়েত চোখে পড়ার মতো। তৃণমূলের সংখ্যালঘু কর্মী-সমর্থকদের সেখানে দেখা গিয়েছে। আমডাঙার বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সাহারাব মণ্ডল বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে আমাদের সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল এবং সংখ্যাগুরু ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছিল। এ বার সংযুক্তা মোর্চা তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এ বার সেই সব ভোট ফিরবে।’’ রফিকুর বলেন, ‘‘প্রথমেই আমাকে প্রার্থী করা হলে এখানে আইএসএফ দানা বাঁধতে পারত না।’’

প্রচারে জামাল আমপানে ক্ষতিপূরণের সরকারি টাকা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা টাকা পাননি।’’

আমডাঙা বিধানসভায় মোট ভোটার প্রায় আড়াই লক্ষ। সংখ্যালঘু ভোট পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি। বিজেপি প্রার্থী জয়দেব মান্না অতীতে তিনি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালে মুকুল রায়ের সঙ্গে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। প্রচারে তিনি শাসক দলের বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগের কথা বলছেন। বলছেন আমপান ও সরকারি বাড়ি প্রকল্পে দুর্নীতির কথা। জয়দেব বলেন, ‘‘গত দশ বছরে আমডাঙায় উন্নয়ন হয়েছে বিক্ষিত ভাবে, বিশেষ বিশেষ এলাকায়।’’ জয়দেব প্রার্থী হওয়ার পরে কিছু মানুষ প্রার্থী বদলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ জয়দেব। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁরা বিজেপির ভোটারই নন।’’ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রফিকুল বলেন, ‘‘অভিযোগ করতে তো আর ট্যাক্স, জিএসটি দিতে হয় না। আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বা বাড়ি তৈরি প্রকল্পের টাকা সরকারি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গিয়েছে।’’ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান, সহিদুল আলিদের মতে, যে-ই জিতুক না কেন, রাজনৈতিক হিংসা যেন বন্ধ হয়। আমডাঙাবাসীর এই স্বপ্ন পূরণ হয় কিনা, আপাতত সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement