Suvendu Adhikari

Bengal Election: মেরুকরণের চড়া সুরে প্রচারে অস্বস্তি ওঁদেরও

কেদার বোস লেনে ভবানীপুর বিধানসভা কার্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার অন্যতম সম্পাদক মুদাসসর আলি খানকে।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৫
Share:

ফাইল চিত্র।

নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর ভোটপ্রচারে মেরুকরণের ডাক তাঁকেও বিঁধছে। প্রাক্তন বাম নেত্রীতথা বিধায়ক, সাগরদিঘির বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুন তা অস্বীকার করছেন না।

Advertisement

আজ, সোমবার ভোট মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে। রবিবার সকালে শেষ মুহূর্তের কর্মিসভার ফাঁকে মাফুজা বলছেন, “শুভেন্দুবাবু যা প্রচার করেছেন, সেটা তাঁর ব্যাপার! আমি তো ওই প্রচার করিনি। আমি বলছি, মোদীজির ‘সব কা বিশ্বাস’-এর কথা!” পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ‘মেরুকরণ-কৌশলে’ সওয়ার হয়ে বিজেপি যখন ভোট-বৈতরণী পার হতে মরিয়া তখন এই রণনীতিতে খানিক অস্বস্তিতে দলেরই একাংশ।

কেদার বোস লেনে ভবানীপুর বিধানসভা কার্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার অন্যতম সম্পাদক মুদাসসর আলি খানকে। তিনি আবার একদা সিপিএম নেতৃত্ব-কথিত ‘দলের সম্পদ’ তপন-শুকুরের শুকুর আলির মেজছেলে। বছর চারেক হল বেঙ্গালুরু থেকে দন্ত্যচিকিৎসক হয়ে ফিরেও মুদাসসর ‘প্র্যাকটিস’ করেন না বলে ফোনে বিষণ্ণ শোনায় গড়বেতার শুকুর আলির গলা। সিপিএমের নন্দীগ্রাম-পুনর্দখল পর্বের কিছু মামলায় এখনও নিয়মিত হলদিয়ায হাজিরা দিতে হয় শুকুরকে। এখনও সিপিএম সদস্য, কিন্তু অসুস্থতার জন্য সক্রিয় নন তিনি। শুকুর বলেন, “মেজ ছেলের বিজেপি করায় কিন্তু আমার ইন্ধন নেই। আমি বিজেপিকেই বামপন্থীদের সব থেকে বড় শত্রু মনে করি।” কলকাতায় শুকুরপুত্র মুদাসসর বিজেপি-র মেরুকরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, “নন্দীগ্রামে যা হয়েছে, যুদ্ধের নিয়ম। তাতে অন্যায় নেই।” শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এক দিনে দল ছেড়ে তাঁর অনুগামী মুসলিম নেতাদেরও দেখা গিয়েছে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রচারে। ১৯৯২-৯৩ থেকে বিজেপিকর্মী, কোচবিহারের আলি হুসেন এখন রাজ্য বিজেপি-র সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি। সুগায়ক, দলের নানা অনুষ্ঠানে বন্দে মাতরম গান। তিনি বলছেন, “দলের যুবমোর্চার সমসংখ্যক কার্যকর্তা মাইনরিটি মোর্চাতেও। রাজ্যে ৩৮টি জেলা কমিটিতে একমাত্র দার্জিলিং ছাড়া সর্বত্র পুরো টিম আছে।” সম্প্রতি সোনারপুরে নরেন্দ্র মোদীর সভায় হেলিপ্যাডে ফেজটুপিধারী এক নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি গোটা দেশে ভাইরাল। তিনি দক্ষিণ কলকাতার সংখ্যালঘু মোর্চা সভাপতি গার্ডেনরিচের জুলফিকার আলি। পেশায় রেস্তরাঁ-কারবারি। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে যিনি কানে কানে বলে এসেছেন, বিজেপিতে থেকে শুধু দেশসেবাই করতে চান।

Advertisement

তবে বিভিন্ন জেলায় বিজেপি-র ঝান্ডাধারী সংখ্যালঘু নেতাদের কারও কারও সঙ্গে কথা বললে, ‘সব কা বিশ্বাস’-এর আস্থার বাইরে খানিক অসহায়তাও মালুম হয়। বছর দুয়েক আগে তৃণমূলছুট, দক্ষিণবঙ্গের এক নেতা যেমন বলছেন, “এখন সব দলই এলোমেলো। ধর্মের জন্য উল্টোপাল্টা তকমা দিয়ে কেস দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। নিজের ধর্মটা বজায় রেখে বিজেপিতে থাকলেই ভাল!”

এ দেশে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর চেষ্টায় জুলুম বা খাদ্যাভ্যাসের জন্য হিংসার নানা ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বলে দাবি করে পাল্টা যুক্তি সাজাচ্ছেন কোচবিহারের আলিসাহেব। সদ্য মালদহে প্রচার সেরে ফিরে তিনি বলছেন, “এটা অনেকেই বুঝছেন, সংখ্যালঘুদের উন্নয়নেও বিজেপিই ভরসা। আমরা শুধু অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে।” এ বার ভোটে টিকিট পাননি। তাঁর আশা, রাজ্যে জিতলে বিধান পরিষদে ঠাঁই পাবেন। তবে অনেক জায়গাতেই টাকা দিয়েও বিজেপির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠছে। যা অস্বীকার করছেন সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি। মেরুকরণের রাজনীতিতে তৃণমূল কিছু কম নয় বলে দাবি করছেন, বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “মৃতের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু এ রাজ্যেও ইলামবাজারে বেশ কয়েক জন মুসলিম ভাই বিজেপির পতাকা হাতে শহিদ হয়েছেন। আমাদের মতো মূলস্রোতের দলে তো তাঁরা আসবেনই!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement