নরেন্দ্র মোদী। ফাইল ছবি।
জেপি নড্ডা, অমিত শাহের পরে এ বার নরেন্দ্র মোদী। ভার্চুয়াল মাধ্যমে হলেও কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় আগামী শুক্রবার ঢুকবেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিধানসভা আসনে মোদীর উপস্থিতিতেই সমাবেশের পরিকল্পনা ছিল বিজেপি-র। কিন্তু কলকাতায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সেই সভা হতে পারে ভার্চুয়াল। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কের বদলে শহিদ মিনার চত্বরে হতে পারে মূল সভা। ভার্চুয়ালি মোদী উপস্থিত থাকবেন ভবানীপুর-সহ কলকাতার সব কেন্দ্রেই। একই ভাবে ওই দিন সভা করবেন মালদহ, বহরমপুর ও সিউড়িতেও।
ব্রিগেড সমাবেশ ছাড়া নীলবাড়ির লড়াইয়ে কলকাতায় একমাত্র ভবানীপুরেই মোদীর সভা করার পরিকল্পনা ছিল বিজেপি-র। সেই পরিকল্পনা থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল, বিজেপি-র প্রধান ৩ কেন্দ্রীয় নেতারই কর্মসূচি কেন ভবানীপুরে? রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই আসনের অবাঙালি ভোট ঝুলিতে পুরতেই এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজ্য বিজেপি-র নেতারা আরও একটি কারণের কথা বলছেন। বিজেপি-র আদি সংগঠন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম এই ভবানীপুরেই। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলায় ক্ষমতায় আসাটাই বিজেপি-র কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই জয়ের মধ্যে যদি ভবানীপুর থাকে তবে সেটা আরও গর্বের হয়ে উঠবে।’’
ভবানীপুরকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয় একেবারে প্রথম থেকেই। নীলবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা প্রচার পর্ব শুরুই করেছিলেন এই আসন থেকে। তখনও পর্যন্ত অবশ্য মনে করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন বলেই ‘ভিআইপি’ মর্যাদা দিচ্ছে পদ্ম শিবির। কিন্তু পরে দেখা যায়, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের হয়ে ভবানীপুরের বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়েছেন অমিত শাহ। এর পরে মোদীর সফরও চূড়ান্ত হয়।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে বিজেপি-র বিরুদ্ধে বার বার ‘বহিরাগত’ আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। আর তার জবাব দিতে মোদী উল্লেখ করেছেন শ্যামাপ্রসাদের কথা। বলেছেন, ‘‘বিজেপি জনসঙ্ঘ থেকে বেরোনো দল। জনসঙ্ঘের জন্মদাতার নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বিজেপি-র ডিএনএ-তে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আচার, বিচার, ব্যবহার, সংস্কার আছে।’’
মোদীর দাবিকে মান্যতা দিলে বাংলা, কলকাতার থেকেও বেশি করে ভবানীপুরই বিজেপি-র ‘ডিএনএ-ভূমি’। শ্যামাপ্রসাদের পিতামহ গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হুগলির জিরাট থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। তখন থেকেই ভবানীপুরের বাসিন্দা মুখোপাধ্যায় পরিবার। শুধু শ্যামাপ্রসাদই নন, ভবানীপুরে জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন তাঁর বাবা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ও।
নড্ডা, শাহ, মোদীদের ভবানীপুরের প্রতি টানের পিছনে ২টি রাজনৈতিক অঙ্কও রয়েছে। প্রথমটি গত লোকসভা নির্বাচনের ফল। ২০১৬ সালে ওই আসন থেকে মমতা জিতেছিলেন ২৫,৩০১ ভোটে। ১৯.৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে। কিন্তু তিন বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা আসনের অন্তর্গত ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে বিজেপি। যদিও লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে তৃণমূল ভবানীপুরে এগিয়ে ছিল ৩,১৬৮ ভোটে। আরও একটা বিষয় সামনে এনে দিয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফল। পদ্মঝড়ের দাপট দেখা যায় ভবানীপুরের যেখানে মমতার বাড়ি, সেই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেই।
আর দ্বিতীয় অঙ্কটি হল ভবানীপুরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই অবাঙালি। ভবানীপুরকে অনেকেই ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলে উল্লেখ করেন। অন্য ভাষাভাষীর এলাকার মতো এই বিধানসভা এলাকায় একটা বড় অংশই আবার গুজরাতি। তাই মোদী-শাহদের প্রতি টানও আছে ভবানীপুরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের। তা ছাড়াও রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের এও বক্তব্য যে, এই আসনে দল জয় পেলে এটা প্রমাণ করা যাবে যে কোনও আবেগ নয়, হেরে যাওয়ার ভয়েই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হন মমতা।