প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোচবিহারের শীতলকুচিতে শনিবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি ও ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে দায়ী করছে বিজেপি। এ বার শিলিগুড়ির সভায় একই সুর শোনা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গলাতেও। সরাসরি মমতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর আক্রমণের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ তুললেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘উনি জনসভায় নিজের ছাপ্পা ভোট গ্যাংকে ট্রেনিং দিচ্ছেন, ট্রেনিং। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ১০ বছর সরকার চালানোর পরে শেখাচ্ছেন, কেমন করে নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘেরাও করতে হয়, কী ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে পেটাতে হয়, আর কেমন করে বুথে হামলা করতে হয়।’’
রাজ্যে চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণের দিন শনিবার শীতলকুচির জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। মৃত্যু হয় ৪ জনের। তার আগে শীতলকুচিতেই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু হয় এক তরুণের। আনন্দ বর্মণ নামে ১৮ বছরের ওই তরুণ পাঠানটুলি শালবাড়ির ২৮৫ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। বিজেপি-র দাবি, আনন্দ তাঁদের সমর্থক। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। তৃণমূল অবশ্য সে দাবি মানতে চায়নি। তবে তার চেয়েও বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে জোড়াপাটকির ঘটনা নিয়ে। তৃণমূল ফের কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বাহিনী। সেই সময় বাহিনীকে ঘিরে ফেলে কয়েকশো মানুষ। আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালাতে বাধ্য হন জওয়ানরা।
এই বিতর্কের মধ্যেই শনিবার মোদী জনসভা থেকে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে যা হয়েছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁর জন্য আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ এর পরেই তিনি সরাসরি মমতাকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘বিজেপি-র প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখে দিদি আর তৃণমূলের গুন্ডারা ঘাবড়ে গিয়েছে। গদি চলে যাচ্ছে দেখে দিদি এই স্তরে নেমে এসেছেন।’’ একই সঙ্গে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘আমি দিদিকে, তৃণমূলকে আর ওদের গুন্ডাদের সাফ সাফ বলছি, ওরা যা চাইবে তাই হবে এমনটা আর চলবে না বাংলায়।’’ এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাছে তদন্তের আর্জিও জানিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে যা হয়েছে তাতে দোষীদের কড়া সাজা দেওয়া হোক।’’
সম্প্রতি কোচবিহারের একটি জনসভাতেই মমতা কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সিআরপিএফ যদি গন্ডগোল করে, মেয়েদের একটা দল মিলে ওদের ঘেরাও করে রাখবেন। আর একটা দল ভোট দিতে যাবেন। শুধু ঘেরাও করে রাখলে ভোট দেওয়া হবে না। তাই ভোট নষ্ট করবেন না। ৫ জন ঘেরাও করবেন। ৫ জন ভোট দেবেন।’’ এই বক্তব্যের জেরে ইতিমধ্যেই কমিশন নোটিস দিয়েছে মমতাকে। মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘এই হিংসা, লোককে নিরাপত্তা রক্ষীদের উপরে আক্রমণ করার উস্কানি দেওয়ার পদ্ধতি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার পদ্ধতি দিদি আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। আপনার ১০ বছরের কুকর্ম থেকে হিংসা আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।’’
মমতার ওই বক্তব্য এবং কোচবিহারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শনিবার মোদীর গলায় বার বারই হুঁশিয়ারির সুর শোনা যায়। মমতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘দেশের বাহাদুর নিরাপত্তা বাহিনী আতঙ্কবাদীদের ভয় পায় না, নকশালদের ভয় পায় না। আপনার পোষা গুন্ডাদের আর আপনার ধমকে ভয় পাবে কি?’’ মোদী এমন অভিযোগও তুলেছেন যে, মমতা তোলাবাজির বিরুদ্ধে কথা না বললেও কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন বাংলার মানুষের গণতন্ত্রিত অধিকার প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে চাইছে তখন সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো ছাপ্পা ভোট দিতে না পারাতেই চিন্তিত তৃণমূল।