প্রতীকী ছবি।
ভোটের দিনে কোচবিহারের শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করল বামেরা। ভোট চলাকালীন বুথ চত্বরে কী ভাবে জমায়েত হল, লাঠি বা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার না করেই কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন গুলি চালিয়ে দিল— তদন্ত করে এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কথা বলেছে তারা। পাশাপাশিই বাম নেতাদের অভিযোগ, বাংলার ভোটে মেরুকরণের রাজনীতিকে উস্কে দিতে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে প্ররোচনামূলক ভাষণ দিচ্ছেন, তার জেরেই হিংসার বাতাবরণ ছড়াচ্ছে এবং কমিশন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘ভোটারদের উপরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি এবং তাতে চার জনের মৃত্যু ভয়াবহ ঘটনা সবর্তো ভাবে নিন্দনীয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত বিচারবিভাগীয় তত্ত্বাবধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করানো এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া। নিহতদের পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেই দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, ভোট চলাকালীন বুথ চত্বরে দল বেঁধে লোক জড়ো হল কী ভাবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী অন্য ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে সরাসরি ভোটারদের উপরে গুলি চালিয়ে দিল কেন— এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে কমিশনকে। কেন্দ্রের ও রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের আচরণে রাজ্যে নির্বাচনের পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় প্রতিবাদী কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিমানবাবু। শিলিগুড়ি বিধানসভার সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওরা নির্বাচন কমিশনকে কব্জা করেছে। কোচবিহারে যে কাণ্ড ঘটল, তার দায় তো নরেন্দ্র মোদীকেই নিতে হবে। তার পুলিশ, জওয়ানরা তো এটা ঘটিয়েছে।’’ গুলিচালনার ঘটনার নিন্দা করে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটদান সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-বুদ্ধিজীবী মঞ্চও।
প্রতিটি ভোটের দিনই সেই দফার নির্বাচনী এলাকা বাদ দিয়ে রাজ্যের অন্যত্র সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সভাগুলির সম্প্রচার বন্ধ করার জন্যও এ দিন ফের কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন বিমানবাবুরা।
কমিশনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য নিহত ও আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন। বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা বলেই ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বাকি চার দফা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ করুক কমিশন।
এই প্রসঙ্গে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই ঘটনার দায় হিংসাশ্রয়ী, সঙ্কীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির। নির্বাচন কমিশনের তৎপরতার অভাব ছিল। কমিশন বাংলার মাটির পরিস্থিতি বুঝতে পারছে বলে মনে হয় না। কমিশন যা বাহিনী দিচ্ছে, তা বাংলায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট নয়। কমিশন ব্যর্থ।’’ আজ, রবিবার রাজ্য জুড়ে ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস।