Tea Garden

Bengal polls: নেই ‘কানুবাবু’, ভোট নিয়ে ভাবেন না পুতলিরা

চা বাগান, জঙ্গল, নেপাল সীমান্ত ঘেরা নকশালবাড়ি এখন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভার অঙ্গ।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ০৭:৫৪
Share:

ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা না-থাকাটা আর কোনও মানেই রাখে না ষাট ছুঁইছুই পুতলি ওরাওঁয়ের কাছে। নকশালবাড়ির সেফদুল্লা জোতের পুতলি বড় হয়েছেন কানু সান্যালের পিছন পিছন ঘুরে। এলাকায় দিনমজুর বিনোদ ওঁরাওয়ের সঙ্গে বিয়ের পর গ্রামেগঞ্জে ঘুরে কাজ করে ভোটটা ঠিকই দিতেন। কয়েক বছর আগে কোনও এক অজানা কারণে ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা যায় পুতলিদেবীর। স্থানীয় মাতব্বর বাড়িতে চক্কর কেটে গ্রাম, পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে ঝগড়া করে আজ ভোটের বাজারে তিনি ব্রাত্য।

Advertisement

একদিন দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন পুতলিদেবী। আজ মেয়ে-মরদ মিলে দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চালান। বলেন, ‘‘ভোট এলে দেখি, নেতারা ঘোরাঘুরি করেন। আমার নাম নেই। কেউ খোঁজও নেয় না।’’ তার পরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘‘কানুবাবু চলে গিয়েছেন। এখন আর ভোট নিয়ে ভাবি না।’’

পুতলিদেবীর মতোই যেন ভোটে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে নকশালবাড়ি। ছ’দশকের পুরনো আন্দোলন, যা এক দিন গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, তার কোনও লেশই আর পড়ে নেই এখানকার ভোটে। অথচ পুলতিদের কথায় এখনও ছায়া পড়ে সেই সব দিনের। ১৯৬৭ সালের জমি, চাষের অধিকারের লড়াই থেকে নকশালপন্থীদের উত্থান। তার স্মৃতি নিয়ে এখনও ১১ জন নিহতের লাল স্মারক মাথা তুলে রয়েছে ধান খেতের সামনে। কিন্তু কোথাও যেন সেই মেজাজ, সেই ধারাটা হারিয়ে গিয়েছে। কানুবাবু আর নকশালবাড়ি থমকে গিয়েছে বইয়ের পাতায়। আর দশটা শহর, গ্রাম বা ব্লকের মতোই নকশালবাড়িও এখন একটা নাম মাত্র।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার থেকে বানারহাটে এসে নকশালপন্থী শ্রমিক সংগঠনে যোগ দেন প্রদীপ দেবনাথ। পরে নকশালবাড়িতে এসে কাজ করেন। আপাতত ছা-পোষা মানুষের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। টিনের দুই কামরার বাড়ির বারান্দায় বসে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে অনেক কথাই বললেন। চোখের সামনে পুলিশের অত্যাচার, গ্রামের পর গ্রামে বিদ্রোহ, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, গোপন বৈঠক— কি না উঠে এল সেই কথায়! একটা সময় নিজেকেই পাল্টে ফেলেন প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অতি বামপন্থী রাজনীতিটাও ছেড়ে দিয়েছি। শাসকদলের সঙ্গেও কাজ করেছি। আবার ভোট এসেছে। আমরা যেমন ছিলাম, তেমনই আছি।’’

চা বাগান, জঙ্গল, নেপাল সীমান্ত ঘেরা নকশালবাড়ি এখন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভার অঙ্গ। নকশালপন্থীরা যদিও বা কেউ ভোটের ধারেকাছে থাকেন, আসল ব্যাটনটা লাল, নীল বা গেরুয়া শিবিরের হাতে। এলাকার তরুণ প্রজন্ম তাই আন্দোলনের ইতিহাসের থেকে কম্পিউটার, ইন্টারনেটে বেশি মনোযোগী। বিনয় রায়, নবীন কার্জি বা শেখর রাইরা সে কথাই বললেন। শাসকদলের নেতা নির্জল দে তাই বলেন, ‘‘নকশালবাড়ি ইতিহাসের পাতাতেই চিরকাল থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement