প্রতীকী ছবি।
কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ নয়। জেলায় ২৭ হাজারেরও বেশি ভোটাররা ভোট দিলেন ‘নোটা’য়। যা শুধু অনেক প্রার্থীকেই পেছনে ফেলেনি, ভোট প্রাপ্তির তালিকাতেও পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে।
২০০৯ সাল থেকে কিছু নির্বাচনে ভোটারদের জন্য এই পছন্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু হলেও ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনে ‘নোটা’-র ব্যবহার শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমে সবার শেষ বোতামটি বরাদ্দ থাকে নোটা বা ‘নান অফ দ্য অ্যাবাভ’। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা কোনও প্রার্থীকেই যদি কোনও ভোটারের পদন্দ না হয় তাহলে তিনি ইভিএমে নোটায় ভোট দিতে পারেন। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা গিয়েছে, ভোট প্রাপ্তির নিরিখে জেলায় অনেক প্রার্থীকে পিছনে ফেলে দিয়েছে নোটা। সেই তালিকায় মূল স্রোতে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা তো বটেই, নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা জেলার দুই প্রাক্তন বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও মইনুদ্দিন শামসও রয়েছেন। দু’জনেই নোটার তুলনায় অনেক কম ভোট পেয়েছেন।
বিজেপিতে যোগ দিয়েও টিকিট পাননি প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। সেই ক্ষোভে লাভপুর কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন তিনি। অনেকেই দাবি করেছিলেন ভোট কাটাকাটিতে তফাত গড়ে দিতে পারেন তিনি। কিন্তু ফল বেরোতেই দেখা গেল মনিরুল পেয়েছেন মাত্র ১৯৯২টি ভোট। সেখানে নোটায় ভোট পড়েছ ৩০৫৭।
একই ছবি নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রেও। এ বার দলের টিকিট না পেয়ে ওই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন বিদায়ী বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস। তিনি পেয়েছেন মাত্র ১৮৩২টি ভোট। সেখানে নোটায় ভোট পড়েছে ১৯০০। এটাই নোটায় পড়া সবচেয়ে কম ভোট।
নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, জেলার ১১টি বিধানসভায় যত সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে শতকরা ১.১৫জন ভোটার নোটায় ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিশনের তথ্য বলছে, জেলায় মোট ভোটার ২৭৯৫২৯৯ জন। সেখানে ভোট পড়েছে ২৩৭৫৬৩৭টি। গড় ৮৪.০৪ শতাংশ। সেখানে নোটায় ভোট পড়েছে ২৭৩০০টি।
ভোট প্রাপ্তির নিরিখে হিসেব উলটপালট করার মতো না হলেও নোটায় ভোট না পড়ে যদি জয়ী বা মূল প্রতিপক্ষের দিকে পড়ত, তাহলে দু-একটি কেন্দ্রে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হয়ে যেত। যেমন দুবরাজপুর। এখানে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ৩৮০০-র কিছু বেশি । নোটায় ভোট পড়েছে ৩১৫৭টি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রেও। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জেতেন সাত হাজারেরও বেশি ব্যবধানে। এখানেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে নোটায়, ৩৩৮১টি। বোলপুরেও নোটায় ভোট পড়েছে ৩৩৩৭টি। শুধু ইভিএম নয়, নোটায় ভোট পড়েছে পোস্টাল ব্যালটেও।
প্রার্থীদের অনেকেই এ জন্য ভোটারদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলির কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়েই ভোটারদের একাংশ নোটায় ভোট দিয়েছেন বলেও মনে করছেন অনেকে। রামপুরহাট বিধানসভায় পরাজিত বিজেপি প্রার্থী শুভাশিস চৌধুরী বলছেন, ‘‘হারলেও আমাকে মানুষ ভোট দিয়েছেন। নোটায় ভোট পড়ে থাকলে সেটা বিজয়ী প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ক্ষোভ থেকেই।’’ যদিও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গণতন্ত্রে মানুষ যাঁকে পছন্দ করেছেন তাঁকে ভোট দিয়েছেন। এই নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে সচেতনতার অভাব থাকতে পারে।’’
লাভপুরের বিজয়ী প্রার্থী তৃণমূলের অভিজিত সিংহের মতে, ‘‘গ্রামে অনেকে সচেতনতার অভাবে নোটায় ভোট দিতে পারেন। শহরে কেন নোটায় ভোট দিয়েছেন তাঁরাই সেটা বলতে পারবেন।’’ জেলায় একটি মাত্র বিধানসভা দুবরাজপুর আসনে জয়ী বিজেপির বিধায়ক অনুপ সাহা এর পিছনে সচেতনতার অভাবকেই দেখছেন।