শোভা মজুমদার। ফাইল চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার বৃদ্ধা শোভা মজুমদারের মৃত্যু এমন কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, যার সদুত্তর নেই পুলিশের কাছেও। সোমবার সন্ধ্যায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঘটনায় নতুন করে খুনের মামলা শুরু করেছে নিমতা থানার পুলিশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ময়না-তদন্তই মৃত্যুর কারণ জানার একমাত্র বৈজ্ঞানিক উপায়। কিন্তু শোভাদেবীর ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত করা হয়নি। কেন? উত্তর নেই পুলিশের কাছে। যিনি ওই বৃদ্ধার ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু শংসাপত্র দিয়েছেন, তিনি উত্তর দমদমের বিজেপি প্রার্থী, চিকিৎসক অর্চনা মজুমদার। শোভাদেবী তাঁরই এলাকার ভোটার ছিলেন। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন বাড়িতে ঢুকে মারধর করায় মারা যান শোভাদেবী। চিকিৎসক হয়েও অর্চনাদেবী বিরোধী দলের হাতে ‘আক্রান্ত’ এক মহিলার মৃতদেহের ময়না-তদন্ত না-করিয়ে মৃত্যু শংসাপত্র দিলেন কেন? তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সংবাদ চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, শোভাদেবীর ছেলে গোপাল মজুমদার চাননি বলেই ময়না-তদন্ত করা হয়নি।
চ্যানেলে অর্চনাদেবীকে বলতে শোনা গিয়েছে, মৃত্যুর পরে তিনি দেহ পরীক্ষা করে দেখেছেন, মাথায় ও মুখে আঘাত ছিল, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও হয়। সেই অনুযায়ী তিনি শংসাপত্র দেন। প্রশ্ন, সুরতহাল ও ময়না-তদন্ত ছাড়া চিকিৎসক কি এ ভাবে মৃত্যুর কারণ বলতে পারেন? অর্চনাদেবীই শেষকৃত্যের পরে নিমতা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। শেষকৃত্যের আগে করেননি কেন? অভিযোগটা গোপাল করেননি কেন? উত্তর নেই।
অভিযোগ, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিজেপি কর্মী গোপালকে পেটাতে ঘরে ঢোকে তৃণমূলের কিছু লোক। শোভাদেবী বাধা দেওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়। গুরুতর জখম হন তিনি। প্রশ্ন, আঘাত গুরুতর হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে না-পাঠিয়ে ২ মার্চ পাঠানো হল কেন? হাসপাতালের নথি বলছে, তাঁর মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। নেক ফিমার ভাঙা। কিডনির অসুখ ছিল তাঁর। তিনি ডায়াবেটিক, হাইপারটেনশনের রোগী। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। পরে রাখা হয় আইসিইউ-এ। চিকিৎসকদের অমতেই ২৪ মার্চ তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কেন? তখনও হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার দরকার ছিল বলে মনে করছিলেন চিকিৎসকেরা। ২৯ মার্চ সকালে বাড়িতেই মারা যান তিনি।
চার্জশিট পেশ হয়েছিল। ধৃত পাঁচ জন জামিন পেয়েছেন। অর্চনাদেবী এখন খুনের অভিযোগ করায় নতুন মামলা শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট নেই। প্রশ্ন, কিসের ভিত্তিতে এটাকে খুন বলবে পুলিশ? উত্তর নেই। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, শোভাদেবীকে মারধর করতেন তাঁর নিকটাত্মীয়ই। পুলিশের প্রশ্ন, ছেলেই যে মাকে মেরে ফেলেননি, তারই বা প্রমাণ কোথায়?