অসতর্ক: ফেলার কথা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে। রঘুনাথপুর মহকুমা গ্রন্থাগারের বুথের বাইরে ছড়িয়ে থাকল ভোট দেওয়ার দস্তানা। ছবি: সঙ্গীত নাগ।
ভোটযন্ত্র ছোঁয়ার সময় হাতে ছিল দস্তানা। বুথের বাইরে বেরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ল যত্রতত্র। লাইনে দাঁড়ানো প্রচুর ভোটারের মুখে দেখা গেল না মাস্ক। করোনা-পরিস্থিতিতে রাজ্যে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে শনিবার। তার মধ্যে ছিল পুরুলিয়ার ন’টি ও বাঁকুড়ার চারটি আসন। এ দিন সকাল থেকে শহর-গঞ্জ-গ্রামের বিভিন্ন বুথে ঘুরে দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক নিয়ম-নিষেধ শিকেয় উঠতে। তবে প্রায় সর্বত্রই বুথে ঢোকার আগে থার্মাল গান দিয়ে জ্বর মেপে হাতে দেওয়া হয়েছে স্যানিটাইজ়ার।
প্রতিটি বুথে এ বার ভোটারদের জন্য সাড়ে আটশো দস্তানা ও ৫০টি মাস্ক দেওয়া হয়েছিল। সবাই যাতে মাস্ক পরে আসেন, সে ব্যাপারে প্রচার করা হয়েছিল। তার পরেও যদি কেউ নিতান্তই ভুলে গিয়ে থাকেন, বা মাস্ক ছিঁড়ে যায়— সে কথা ভেবে অল্প ওই ক’টি মাস্ক রাখা হয়েছিল। প্রচুর বুথে অল্প সময়ের মধ্যেই তা বাড়ন্ত হয়। তার পরে, মাস্ক না পরে আসা ভোটাররা গামছা, রুমাল বা আঁচলে মুখ ঢেকে ভোট দেন।
বেলার দিকে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের নন্দুয়াড়ার একটি বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বধূ প্রমীলা বাউড়ি ও অঞ্জনা বাউড়ি। মুখে ছিল না মাস্ক। তাঁরা বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, এখানে নাকি মাস্ক দেবে।’’ শেষ পর্যন্ত দু’জনে আঁচলে মুখ ঢেকে ভোট দিতে ঢুকেছেন। ওই বুথের এক ভোটকর্মী বলেন, ‘‘অধিকাংশ লোকজনই মাস্ক পরে আসেননি। ১০টার মধ্যে সব মাস্ক শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
নন্দুয়াড়ার অন্য বুথে ভোট দিতে যাওয়া স্থানীয় বধূ সোনালি মাঝি বলেন, ‘‘আমরা পরে এলেও অনেকে মাস্ক ছাড়া লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সবাই না পরলে সংক্রমণের ভয় থেকেই যায়।’’ রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডির একটি বুথে জীর্ণ মাস্ক পরে এসেছিলেন মমতা কৈবর্ত্য ও নমিতা কৈবর্ত্য। তাঁরা বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, মাস্ক না পরে এলে ঢুকতে দেবে না। লকডাউনের সময় এগুলো কিনেছিলাম। খুঁজে
বার করেছি।’’
পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ার একটি বুথে দেখা গেল, যত্রতত্র দস্তনা ছড়িয়ে রয়েছে। ভোট দিয়ে সেগুলি নির্দিষ্ট বিনে ফেলার কথা ভোটারদের। এক পুলিশকর্মী বলেলেন, ‘‘শহরের বুথ। প্রচুর শিক্ষিত মানুষজন আসেন। কিন্তু সচেতনতার বহর এমনটাই!’’ বাঁকুড়ার ছাতনার আগয়া প্রাথমিক স্কুলের বুথে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘এ ভাবে কোনও দিন ভোট দিইনি। দস্তানাটা আর ফেলব না, বাড়ি নিয়ে যাব।’’
ভোটকর্মীদের জন্য মাস্ক, ফেসশিল্ড ও রবারের দস্তানা দেওয়া হলেও কেউ কেউ সে সব পরেননি। ছাতনার একটি বুথের এক ভোটকর্মী বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমে সব সময় মাস্ক মুখে রাখা যাচ্ছে না। আর রবারের দস্তানা পরে তাড়াতাড়া কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।’’
কিছু বুথের সামনে গোল দাগ কেটে ভোটারদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিছু জায়গায় সিআরপি জওয়ানেরা লাইন সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু বান্দোয়ানের গঙ্গামান্না, ঋষি নিবারণচন্দ্র হাইস্কুলের মতো দুই জেলার প্রচুর বুথেই দূরত্ব-বিধি বজায় থাকেনি। কয়েকজন সিআরপি জওয়ান জানান, প্রচণ্ড রোদে পুড়ে ভোটারেরা ছায়া পেলেই এক জায়গায় জড়ো হচ্ছিলেন। তাঁদের জোর করে রোদে নিয়ে যাওয়াও যাচ্ছিল না।