West Bengal Assembly Election 2021

Bengal polls: জয় নিয়ে নিশ্চিত নন কেউই

হাওড়া গ্রামীণ এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষের ঝড় হেস্টিংসের বিজেপির কার্যালয়ে আছড়ে পড়েছিল।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে শক্ত ঘাঁটি। হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় দাপটে ব্যাট করেছে তৃণমূল। গত বিধানসভা ও লোকসভা দুই ভোটেই অনেক পিছিয়ে বিজেপি। তবু কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ‘লখিন্দরের লোহার বাসরঘরেও কিন্তু ছিদ্র ছিল।’

Advertisement

হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় গড়ে ৩০ শতাংশের মতো সংখ্যালঘু ভোটে অধিকাংশই যায় তৃণমূলের ঝুলিতে। এ বারও কি সেই অঙ্কে বাজিমাত করতে পারবে শাসক দল? না কি সংযুক্ত মোর্চা গলার কাঁটা হয়ে উঠবে?

স্বস্তিতে নেই বিজেপিও। হাওড়া গ্রামীণ এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষের ঝড় হেস্টিংসের বিজেপির কার্যালয়ে আছড়ে পড়েছিল। সেই ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি।

Advertisement

আমতার কলেজ মোড়ের কাছে পার্টি অফিসের দোতলায় বসে উলুবেড়িয়া উত্তরের দু’বারের বিধায়ক, এ বারের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজি অবশ্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “বিজেপিকে ঠেকাতে এ বারের ভোটে সংখ্যালঘু ভোট আরও বেশি করে আমাদের দিকে এককাট্টা।” পার্টি অফিসের দোতলায় ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকছেন নির্মলবাবু। নির্মলবাবু বলেন, “প্রচারে বেরনোর মায়ের কাছে আশীর্বাদ নিই।
এলাকায় উন্নয়ন প্রচুর হয়েছে। আমতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, কত ফিরিস্তি দেব?”

তবু নিশ্চিন্তে আছেন কি নির্মলবাবু? এলাকার মানুষরা জানাচ্ছেন, কাটমানি, আমপানের ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত লোকসভা ভোটে উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে, উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা এলাকায় মাত্র ১৪ হাজারের মতো ভোটে তৃণমুল এগিয়ে ছিল। এই ব্যবধান পেরোতে এ বার মরিয়া বিজেপি।

এই বিধানসভা কেন্দ্রের উদং গ্রামের মন্দিরে পুজো দিয়ে উলুবেড়িয়া উত্তরের বিজেপি প্রার্থী চিরণ বেরা রজনীগন্ধার মালা পরে এলাকায় রোড শো করছিলেন। প্রার্থীর নাম কী? মিছিল দেখতে আসা এক গৃহবধূকে বলেন, ‘‘প্রার্থীর নাম জানা নেই।’’ চিরণ অবশ্য বলেন, “নাম না জানলেও ক্ষতি নেই। মানুষ এবার পদ্ম প্রতীককে তো চেনে।” এই কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চার সিপিআইএম প্রার্থী অশোক দলুই সংখ্যালঘু গ্রামেই প্রচার করছেন বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। অশোকবাবু অবশ্য বলেন, “কেন্দ্রের সর্বত্রই ঘুরছি। এখানে ত্রিমুখী লড়াই।”

তবে গ্রামবাসীরা মনে করছেন, ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা এলাকার বিধায়ক অসিত মিত্রের আমতা বিধানসভা কেন্দ্রেই।

রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরীর মাঝে দ্বীপ এলাকা ভাটোরায় প্রচার করছিলেন অসিতবাবু। মানুষকে এখনও দু’টাকা দিয়ে বাঁশের সেতু দিয়ে ওপারে ভাটোরা দ্বীপে যেতে হয়। এলাকার এক যুবক বলেন, “বাঁশের সেতু পাকা হচ্ছে তো অসিতবাবুর জন্যই।” অসিতবাবু বলেন, “উন্নয়নই আমাকে জেতাবে।”

অসিতবাবুর জন্যই লড়াইটা যে কঠিন হয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল প্রার্থী সুকান্ত পালও। সুকান্তবাবু মুখে অবশ্য বলেন, “গত লোকসভা ভোটে আমতা এলাকায় কংগ্রেস মাত্র ৬৩৩৫ ভোট পেয়েছে। এতটা ঘাটতি মিটিয়ে অসিতবাবুর জেতা কি সম্ভব?”

আমতার কোরিয়া গ্রামের গাইঘাটা খালের ধারে গ্রামবাসীদের জন্য দুপুরে ডিম-ভাতের ব্যবস্থা করেছে বিজেপি। কোরিয়া গ্রামের এক দোকানদার অবশ্য কটাক্ষ করে বলেন, “দিদিমণি সারা বছর বিনা পয়সার চাল, কন্যাশ্রী, সাইকেল, ট্যাব দিয়েছে। ভোটের
আগে ডিম-ভাত কাজে দেবে না।” এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা দেবু দত্তের মতে, ফি বছরে দামোদরের বন্যার হাত থেকে কী ভাবে মুক্তি পাব, সেই নিয়ে তো সবাই চুপ। আসানসোলের বাসিন্দা বিজেপি প্রার্থী দেবতনু হিন্দু সংহতির নেতা। তাঁর অবশ্য দাবি, “প্রার্থী পরিচিতি এখানে কোনও বিষয় নয়। আমপানের দুর্নীতি নিয়ে এলাকায় অভিযোগ আছে।”

জগৎবল্লভপুরের ধানের খেতের মাঝে দ্বীপের মতো গ্রামগুলোতে প্রায় ১০০টি টোটো নিয়ে ‘রোড শো’ করছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সীতানাথ ঘোষ। সীতানাথের বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বী অনুপম ঘোষ তৃণমূল থেকে এসেছেন। এলাকার সংযুক্ত মোর্চার ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট প্রার্থী সাবির আহমেদও প্রাক্তন তৃণমূল। লড়াইটা বর্তমান তৃণমূল বনাম প্রাক্তন তৃণমূলে। জগৎবল্লভপুরের গোদারিয়া এলাকার এক গ্রামবাসী অতুল মাজি বলেন, “লড়াই হবে। গ্রামবাসীরা সবাই জল পাননি। বাজারে যানজট খুব বড় সমস্যা।”

বন্যা কবলিত এলাকা উদয়নারায়ণপুরের বিজেপি প্রার্থী সুমিতরঞ্জন কাড়ার প্রার্থী পদ নিয়ে অসন্তোষ ছিল। সেই এখন সবাই একসঙ্গে লড়ছেন বলেই দাবি করছেন বিজেপি প্রার্থী সুমিতরঞ্জন। উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা এলাকার বিধায়ক সমীর পাঁজার মতে, “দামোদরে বাঁধ দিয়ে বন্যা আটকাচ্ছি। এই ভোটে উদয়নারায়ণপুরের বামের ভোট রামে কতটা যাবে সেটাই দেখার।’’ তবে এলাকার মানুষরা জানাচ্ছেন, উদয়নারায়ণপুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। বিকেলের পরে হাওড়া যাওয়ার বাস থাকে না।

শ্যামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে গ্রামীণ এলাকায় একটি পাইস হোটেলের এক কর্মী বলেন, “ভোট চাইছে শাসক দল। অথচ এখানে এখনও ভাল হাসপাতাল হল না।” শ্যামপুরের বিজেপির তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী টোটোতে যেতে যেতেই বলেন, “হাসপাতাল নেই, পানীয় জল নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব।” যদিও এলাকার চার বারের বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ মণ্ডল বলেন, “পরিষেবা ভাল বলেই চার বারের বিধায়ক আমি। এখানে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হবে।” কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তীর দাবি, “এই ভোটে শ্যামপুরে তৃণমূল ও বিজেপি দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়ার জন্য লড়ছে।”

সকালে প্রচার সেরে দুপুরে বিশ্রাম নেওয়ার ফাঁকে বাগনানের তৃণমূল প্রার্থী অরুণাভ সেন বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনে বাগনান বিধানসভা থেকে ৪৮ হাজারের মতো ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তাই আত্মবিশ্বাসী।” বিজেপি প্রার্থী অনুপম মল্লিক অবশ্য বলেন, “বেশ কিছু এলাকায় ভোটটাই করতে দেয়নি তৃণমূল। তাই এই ব্যবধান।”

উলুবেড়িয়া দক্ষিণের কালনগর এলাকায় বিকেলে ছিল তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায়ের ‘রোড শো’। পুলকবাবুর দাবি, “কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, বিনা পয়সার চাল সবই পেয়েছেন এলাকার মানুষ। এটাই আমাদের শক্তি।” আবার বিজেপির তারকা প্রার্থী পাপিয়া অধিকারী রোড শোয়ে বলছেন, “এই সরকার চলছে দান খয়রাতিতে।”

গ্রামীণ হাওড়ায় সাত বিধানসভা কেন্দ্রে পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও কোনও দলই জয় নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। বাগনানে, বম্বে রোডের পাশে চায়ের দোকানে কয়েক জন স্থানীয় প্রৌঢ় এমনই বলছিলেন। বিজেপি ও তৃণমূল— দুই দলেরই সমর্থকদের যা হাবভাব, মনে পড়ছে ফেলুদার উক্তি, “এ বার আর নিশ্চিন্তে থাকা গেল না রে তোপসে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement