মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয় উস্কে দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি-বিরোধী জোটের ভাবনা। তৃণমূলনেত্রী অবশ্য বিষয়টিকে ‘ভবিষ্যতের’ উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে সেই সঙ্গেই ‘বার্তা’ দিয়েছেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়েরও।
একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে মমতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তিনিই বিরোধী জোটের ‘মুখ’ হবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়ই আপনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। ভোটের সময় অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি থাকতে হয়। এখন কোভিড পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়। লড়াই শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি দলও গড়ব।’’
জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী লড়াই জোরদার করতে পরামর্শদাতাদের সাহায্য নেওয়ার কথা জানালেও বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের নেপথ্যে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি মমতা। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘আমি এই জয় মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এটা তাঁদের জয়, তাই তাঁদের কাছেই উৎসর্গ করছি।’’
ওই সাক্ষাৎকারে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন তিনি। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে বলেছেন, ‘‘সিবিআই, ইডি-র মতো সরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করে যে রাজনীতি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা করছেন, তার অবসান হওয়া উচিত। বিজেপি-র পুরনো নেতারাও মোদী-শাহের রাজনীতি ধরনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশকে আর এমন রাজনীতির মুখোমুখি হতে দেওয়া যায় না। মোদী-শাহের থেকে অনেক যোগ্যরা রয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের প্রচারপর্বের সময়ই মার্চ মাসে দেশের পনেরোটি বিরোধী দলের নেতাকে চিঠি দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন মমতা।
শুধু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নয়, রাজ্যে বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকাকেও নিশানা করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।’’ একই ভাবে ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরেও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ফের ‘পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের’ অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
বিধানসভা ভোটের প্রচারের বিজেপি-র বিরুদ্ধে নেটমাধ্যমে ভুয়ো ছবি, অডিয়ো এবং ভিডিয়ো প্রচারের অভিযোগ তুলেছেন মমতা। রাজ্য জুড়ে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষের দায়ও বিজেপি-র উপরে চাপিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এমন হিংসার রাজনীতি বিজেপি-ই করে থাকে। কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং টিকাকরণ নিয়ে মোদী সরকারের ভূমিকা এবং টিকা দামে বৈষম্যের প্রসঙ্গও এসেছে সাক্ষাৎকারে। মোদী-শাহ জুটি সম্পর্কে তৃণমূলনেত্রীর ‘পর্ববেক্ষণ’— ‘‘ওঁরা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকেই ধ্বংস করতে চান।’’