মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
শিল্প-এলাকায় এসে বেসরকারিকরণ, কারখানা বন্ধ-সহ নানা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ৬৪ হাজার কোটি টাকায় শিল্পনগরী তৈরি ও কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দেন তিনি। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার মেজিয়ায় মমতার ওই মন্তব্য আদতে বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ শিল্প-এলাকার শ্রমিক মন পাওয়ার লক্ষ্যেই করা বলে জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মধ্যে। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
মেজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের সভায় মমতা বলেন, ‘‘মেজিয়া, বড়জোড়া, আসানসোল, দুর্গাপুরে বহু শ্রমিক কাজ করেন। দেশে হাজার-হাজার কারখানা বিজেপির আমলে বন্ধ হয়েছে। রেল, বিএসএনএল, সেল, ব্যাঙ্ক, খনি বিক্রি করা হচ্ছে। এখানকার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (এমটিপিএস) থেকে রেল, আমরা কিছুই বন্ধ হতে দেব না।’’
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বর্ধমানে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল-এর ২২টি খনি এবং বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ। চালু রয়েছে ৮৮টি খনি। ঘটনাচক্রে, খনি শিল্পে বেসরকারিকরণ, রেলের কারখানা চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসকে ‘কর্পোরেট’ করা-সহ নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, এমনই অভিযোগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি আন্দোলনও করছে। পাশাপাশি, বাঁকুড়া জেলাতেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রের কয়েকটি বেসরকারি কারখানা বন্ধ।
এই এলাকার বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে ‘নির্ণায়ক-ফ্যাক্টর’ শ্রমিক-ভোট। মমতার এই মন্তব্য সে দিকে তাকিয়েই কি না, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। বাঁকুড়ার বাসিন্দা তথা সিটুর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কিঙ্কর পোষাকের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের জমানায় বাঁকুড়ায় ছ’টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ওদের মুখে শ্রমিক-স্বার্থের কথা মানায় না।’’ আইএনটিইউসি-র রাজ্য় নেতা নীলমাধব গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘মমতা এনডিএ সরকারের মন্ত্রী থাকার সময়ে দুর্গাপুরে তিনটি, রানিগঞ্জের জেকে নগরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হয়েছিল। দুর্গাপুরে রাজ্য সরকার পরিচালিত একটি কারখানার অর্ধেকের বেশি বন্ধ।’’ যদিও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অলকা সেন মজুমদারের দাবি, ‘‘শুধু ভোটের জন্য নয়। দিদি বরাবরই শ্রমিকদের পক্ষে। বাঁকুড়ার ছ’টি বন্ধ কারখানার মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই ফের চালু হয়েছে। দিদির নির্দেশেই আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়ছি।’’
আরএসএস প্রভাবিত বিএমএস-এর রাজ্য নেতা ধনঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘‘বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আমরাই লড়ছি। তৃণমূল যা বলছে, সবটাই ভোটের দিকে তাকিয়ে।’’ বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজ্য সরকারের ভ্রান্ত নীতির জন্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্পাঞ্চলগুলি ধুঁকছে। কেন্দ্র সরকারই বরং দেশ জুড়ে শিল্পের পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করছে।’’