West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: এক ফোনে ভিআইপি, প্রলয় বললেন, ‘স্পষ্ট কথা বলেছি, মুখ্যমন্ত্রীর তো খুশি হওয়া উচিত’

বছর তেতাল্লিশের প্রলয়ের দাবি, শনিবার সকাল ৯টা ২৭ মিনিট নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ‘আননোন’ নম্বর দেখে তিনি ফোন কলটা রেকর্ড করেন।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ১৮:৩০
Share:

প্রলয় পাল ।

মিনিট তিনেকের একটা কথোপকথন। সপ্তাহান্তে সেটাই প্রলয় পালকে বিখ্যাত করে দিয়েছে! পিছু ধাওয়া করছে সংবাদমাধ্যমের পাল। সকলে ফোনে কথা বলতে চাইছে। কিন্তু তিনি ধরা দিচ্ছেন না। ধরছেন না ফোন।

Advertisement

একে-তাকে জিজ্ঞাসা করে অগত্যা প্রলয়ের বাড়িতেই যাওয়া গেল। চণ্ডীপুর-টেঙ্গুয়া রাস্তা থেকে ডান দিকে ঘুরে বিরুলিয়া বাজার। সেখান থেকে আঁকাবাঁকা ঢালাই পথে কিলোমিটার তিনেক। কিন্তু না। তত ক্ষণে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। আবার ফোন। এ বারও অধরা। অনেক ঘোরাঘুরির পর শেষ গন্তব্য রেয়াপাড়ায় শুভেন্দু অধিকারীর ভোট কার্যালয়। সেখানে পৌঁছেও প্রলয়কে প্রাথমিক ভাবে খুঁজে পাওয়া গেল না। উঁকিঝুঁকি মারতে গিয়ে দেখা গেল, কার্যালয়ের ভিতরের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে তিনি বসে। স্থানীয় প্রহরা পেরিয়ে সটান ঢুকে পড়ে বলা গেল, ‘‘কথা বলতে চাই।’’ মার্জিত প্রলয় একটুও অবাক না হয়ে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, বসুন।’’

মন্ত্রীর সঙ্গে সামান্য কথোপকথন সেরে আগন্তুকের দিকে তাকালেন। বলা গেল, ‘‘আপনি তো মশাই একেবারে তারকা হয়ে গিয়েছেন! ফোনও ধরছেন না। ধরাও দিচ্ছেন না।’’ সাদা হাফহাতা শার্ট আর কালো রঙের ট্রাউজার পরা ছোটখাটো চেহারায় ফুটে উঠল অপ্রতিভ হাসি, ‘‘কী যে বলেন!’’

Advertisement

প্রথম প্রশ্ন— মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন তো? ছোট চোখ দুটো প্রায় কপালে তুলে প্রলয় জানতে চাইলেন, ‘‘মানে?’’ আনন্দবাজার ডিজিটাল তো ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। হাসিটা আবার ফিরে এল। এর পর প্রলয় যে ভাবে একটানা বলে গেলেন, তাতে আর পাল্টা প্রশ্ন করার জায়গা ছিল না। বছর তেতাল্লিশের প্রলয়ের দাবি, শনিবার সকাল ৯টা ২৭ মিনিট নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ‘আননোন’ নম্বর দেখে তিনি ফোন কলটা রেকর্ড করেন। এমনিতে কখনও কারও কল রেকর্ড করেন না। কিন্তু এটা করেছিলেন। তাঁকে ও পাশের মহিলাকণ্ঠ বলেন, ‘‘দিদি বলছি।’’ পাল্টা প্রলয় জানতে চান, কোন দিদি? জবাব আসে, ‘‘মমতাদিদি।’’

এর পরের কথোপকথন গোটা রাজ্য শুনেছে। শুনেছে, কী ভাবে মার্জিত অথচ দৃঢ় ভাবে প্রলয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

পরিবার একটা সময় কংগ্রেস করত। যে সময় রাজ্যে সিপিএমের রমরমা। মমতা তৃণমূল গঠন করার পর তাঁর পরিবার নতুন দলে জুড়ে যায়। ‘‘আমরা কিন্তু শিশিরবাবুর (অধিকারী) আগেই তৃণমূলে এসেছিলাম,’’— শোনাতে ভুললেন না প্রলয়। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩— মমতার সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বিরুলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন চিত্তরঞ্জন পাল, প্রলয়ের বাবা। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই প্রলয় দলের প্রতি আর টান অনুভব করতেন না। শেষে বিজেপি-তে চলে যান। সামান্য কর্মী হিসেবেই। সেই প্রলয় এখন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি একাধিক চুরির অভিযোগও করেছেন। সংখ্যাটা প্রলয়ের হিসেবে প্রায় ২০০। সেই ফাইলও হাতে নিয়ে দেখালেন।

আরও পড়ুন:

কিন্তু প্রলয়ের আসল খারাপ লাগার জায়গাটা অন্যত্র। তাঁর দাবি, তিনি এলাকায় সোশ্যাল স্টাডিজের কাজ করতেন। ইউনিসেফের একটা কাজে জুড়ে যান। বছরে মাত্র ১২ দিন কাজ। প্রতি দিনের পারিশ্রমিক ১২ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁকে একটি ‘রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হত। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে বারংবার সেটা চাওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ওই শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। সেই খারাপ লাগা থেকেই দলবদল। মুখ্যমন্ত্রীকে শনিবার সেটাই জানিয়েছেন প্রলয়। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবেন না। প্রাক্তন দলের সর্বময় নেত্রীকে মুখের উপর ‘না’ বলতে খারাপ লাগল না? প্রলয়ের স্পষ্ট জবাব, ‘‘যেটা পারব না, সেটা সোজাসুজি বলতে খারাপ লাগবে কেন! ওঁর তো খুশি হওয়া উচিত।’’

কিন্তু তিনি যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে দল ছেড়েছিলেন, সেই দলের প্রাক্তন নেতা শুভেন্দু অধিকারীই তো এখন নন্দীগ্রামে প্রার্থী। তিনি নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়কও বটে। যে ২০০টি অভিযোগের কথা তিনি বলছেন, সেই স্থানীয় নেতারাও তো তখন তৃণমূলে শুভেন্দুর ছত্রছায়ায়। অথচ এখন সেই শুভেন্দুর হয়েই তিনি ভোটপ্রচার করছেন। মমতাকে না বলছেন! থামিয়ে দিলেন প্রলয়, ‘‘রাজনীতিতে অনেক কিছু হয়। আর আমি যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে-অভিমানে দল ছেড়েছিলাম, তাঁরা সকলেই স্থানীয়। শুভেন্দু’দা নন। কাজেই এটার মধ্যে অন্য কিছু না খোঁজাই ভাল।’’

বিরুলিয়া বাজারে তাঁর খোঁজ নিতে গিয়ে এক মিষ্টির দোকানদারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ইনি হলেন তিনি, যিনি বিরুলিয়ায় মমতা আঘাত পাওয়ার পর তাঁর পায়ে বরফ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘এলাকায় প্রলয়দের পরিবারের সততা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। সিপিএম আমলে অনেক মারধরও খেয়েছে ওরা। দাপটও আছে। সেই জায়গা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে না বলতে পেরেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement