তেহট্টের জনসভায় অমিত শাহ (বাঁ দিকে), জগদ্দলে নির্বাচনী সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। শুক্রবার।ছবি: সাগর হালদার, ছবি: মাসুম আখতার
মতুয়া ও উদ্বাস্তু এলাকায় ভোটের প্রচারে নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপিকে খোলামেলা চ্যালেঞ্জ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার নদিয়ার নবদ্বীপ ও উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় জোড়া সভা থেকেই বিজেপির ‘নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি’ খারিজ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আমি বাজে কথা বলতে পারি না। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সবাই এ দেশের নাগরিক।’’ নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মিথ্যাচার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূলনেত্রী।
বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যের দুটি বড় মতুয়া অধ্যুষিত অঞ্চল নদিয়ার রানাঘাট ও উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা- বনগাঁর ভোটে নাগরিকত্ব অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ দিন দুই জেলার এই অংশের ভোটারের কাছে ভোট চেয়ে সভা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা। স্বাভাবিক ভাবেই এই অঞ্চলের নির্বাচনী সভায় এসেছে এনআরসি- এনপিআর এবং নাগরিকত্বের মতো বহুচর্চিত বিষয়গুলি।
নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বরাবরই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথেই গিয়েছে তৃণমূল সরকার। তার কারণ ব্যাখ্যা করে দুটি সভাতেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘কাকে নাগরিকত্ব দেবে? তার মানে মতুয়ারা কি এখন নাগরিক নন?’’ নিজেই সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সব উদ্বাস্তু কলোনির স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের সব কলোনির জমির পাট্টা দিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কলোনির উদ্বাস্তুরাও নাগরিক। কেউ তাদের উচ্ছেদ করতে পারবে না। সবাই। জমির নিঃর্শত দলিল পাচ্ছেন। পাবেন।’’ তারপরই অসমের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “ওখানে ৬ তারিখে নির্বাচন শেষ হয়েছে, আর ৮ তারিখে নোটিস জারি করেছে— সব ডিটেনশন ক্যাম্পে চলে যাও। আমাদের এখানে এনআরসি করতে দেব না। দিল্লি আমাদের কথায় চলবে, আমরা দিল্লির কথায় চলব না।’’
প্রত্যেককে ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘দয়া করে ভোট দেবেন। ভোটার তালিকা থেকে নাম যেন বাদ না যায়। ভোটার লিস্টে নাম থাকা জরুরি। নাগরিকত্বের জন্য অন্য কোনও প্রমাণ থাকার দরকার নেই। তারপরই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে এনআরসি- এনপিআর করে দিতে পারে।’’
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আগে তো কখনও মতুয়াদের ওখানে যাননি। এ বার ভোটের জন্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে আমাকে বলা হয়েছিল। ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্কের কারণে আমি গিয়েছি।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘এবারের নির্বাচনের সময় আমাকে বলোনি। এটা ভোটের খেলা। এরপরে যদি বল, আর তোমার সঙ্গে যাবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গেলে একা যাবে।’’