নন্দীগ্রামের বয়ালে অশান্তি, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রিপোর্ট চাইল কমিশন
Mamata Banerjee

Bengal polls: তবু জিতব, দৃঢ় মমতা

শুধু হুঁশিয়ারি দিয়েই থামলেন না নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রার্থী। স্কুলের ভিতরেই বুথের ঘর ছেড়ে বারান্দায় ঠায় বসে থাকলেন প্রায় দু’ঘণ্টা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০৯
Share:

নির্বাচন কমিশনকে লেখা অভিযোগপত্র হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দননায়েকবাড় বুথ থেকে ভোট দিয়ে বেরোনোর সময়ে শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বাইরে গনগনে তাপ। বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকল হুইল চেয়ার। শশব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন সকলে। ‘‘কী হচ্ছে এখানে? কেন ভোট দিতে পারবেন না মানুষ? কেন বাইরের লোক এসে ছাপ্পা দেবে?’’

Advertisement

শুধু হুঁশিয়ারি দিয়েই থামলেন না নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রার্থী। স্কুলের ভিতরেই বুথের ঘর ছেড়ে বারান্দায় ঠায় বসে থাকলেন প্রায় দু’ঘণ্টা। সেখানে বসেই ফোনে ধরলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। নির্বাচন কমিশনকে লেখা অভিযোগপত্র দেখালেন সাংবাদিকদের। দফায় দফায় দৌড়ে এলেন কমিশন এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা। আর বাইরে চলল দু’দল জনতার তুলকালাম। শেষে দু’আঙুলে ‘ভি’ দেখিয়ে বয়াল ছাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোটের দিনে বুথ আগলে হুইলচেয়ারে বসা এক মুখ্যমন্ত্রীর এমন লড়াই আগে দেখেনি এ রাজ্য। যে লড়াইয়ের শেষে মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী, ‘‘নন্দীগ্রামে ৯০% ভোট তৃণমূল পাচ্ছে। আমিই জিতব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী কাজ করছে, যে কমিশন শুধু বিজেপিকেই সাহায্য করছে, তাদের বলছি, এ ভাবে আমাদের হারানো যায় না!’’ সঙ্গে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রাম নিয়ে চিন্তিত নই। আমি চিন্তিত গণতন্ত্র নিয়ে।’’

Advertisement

উল্লেখ করা যেতে পারে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, নন্দীগ্রামে ভোট পড়েছে প্রায় ৮০.৭৯ শতাংশ। দিনভর বিভিন্ন বুথে মহিলাদের লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। সোনাচুড়া, কেন্দেমারিতে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া অশান্তির তেমন কোনও অভিযোগও নেই। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ যে প্রসঙ্গে, তা নির্দিষ্ট একটি এলাকার ঘটনা। কিন্তু ভোটের দিনে নন্দীগ্রামের সার্বিক ছবি নিয়ে ‘আত্মবিশ্বাসী’ বলেই মমতা জয়ের দাবি করেছেন। আবার উল্টো দিকে ‘প্রত্যয়’ দেখিয়ে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীও জয়ের হাসির কথা বলেছেন।

আগের রাতে ভয় দেখানো এবং বহিরাগত নিয়ে আসার ভূরি ভূরি অভিযোগ থাকলেও ভোটের সকাল থেকে নন্দীগ্রাম ছিল মোটের উপরে নিস্তরঙ্গই। সকাল থেকে রেয়াপাড়ার বাড়িতেই ছিলেন মমতা। দুপুর থেকে শেখ সুফিয়ান, স্বদেশ পাত্রদের মতো স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে অভিযোগ আসতে থাকে, বয়ালে বুথ দখল করেছে বিজেপি। বৈধ ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। দুপুর ১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমেই বয়ালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে দেখে শেখ সফিউদ্দিন, আসমা বিবিরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে ভোজালি-কাটারি দেখিয়ে বিজেপির দুষ্কৃতীরা তাঁদের বুথে ভোট দিতে দিচ্ছে না। অভিযোগ শুনে বয়ালের ৭ নম্বর বুথে গিয়ে ঢোকেন মমতা। বাইরে থেকে বুথ ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। বিজেপি সমর্থক অন্য এক দল জনতা পাল্টা দাবি করতে থাকে, অভিযোগকারীরা ৭ নম্বর বুথের ভোটারই নন।

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বসে আছেন খবর পেয়ে প্রথমে বুথে আসেন কমিশনের দুই পর্যবেক্ষক। মমতা তাঁদের বলেন, তিনি ভোটদানে বাধা না দিয়ে বুথে বসে আছেন মানুষের নিরাপত্তার দাবিতে। এলাকার যা পরিস্থিতি, তাতে যে কোনও সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। বাইরে যুযুধান তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের পরস্পরের বিরুদ্ধে হুঙ্কারের আওয়াজ তখন বুথের ভিতরেও পৌঁছচ্ছে। সে দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘‘বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে জমায়েত না করার নির্দেশ আছে কমিশনের। কিন্তু এখানে দেখুন, কী হচ্ছে!’’ তাঁরা বিষয়টি দেখছেন বলে ঘটনাস্থল ছাড়েন দুই পর্যবেক্ষক।

তার পরেই সঙ্গে বাহিনী নিয়ে আসেন নন্দীগ্রামের জন্য বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। তাঁকেও অভিযোগের বিবরণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপাঠী জানান, তিনি কিছু সময় আগেই বয়ালে সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে গিয়েছেন। তখন এমন উত্তেজনা ছিল না। মমতা পাল্টা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপির বাহিনীকে ভোট লুঠে সাহায্য করছে! ত্রিপাঠী দৃঢ় স্বরেই জবাব দেন, ‘‘ম্যাডাম, এই উর্দিতে থেকে তেমন কিছু হতে দিতে পারি না, এখানে দিচ্ছিও না।’’ অন্য দিকে, রাজ্যপাল ধনখড় টুইট করে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ তিনি সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানিয়ে দিয়েছেন। গণতন্ত্রের স্বার্থে সকলেই আইনের শাসন মেনে চলবেন বলে তিনি আশাবাদী।

বাইরের মাঠে ধুন্ধুমারে জড়িয়ে পড়া তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের এর পরে দূরে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও র‌্যাফ। এক পক্ষ তখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছে, অন্য দিক থেকে ভেসে আসছে ‘বাপ-ব্যাটা চোর’ চিৎকার। জমি আন্দোলনে দুই বিবদমান পক্ষ থেকেই শেখ সেলিম, ইমদাদুলদের পাশাপাশি বিশ্বজিৎ, শঙ্কর সামন্তদের দেহ দেখেছে নন্দীগ্রাম। কিন্তু ভোটের দিনে যুযুধান দুই শিবিরের সমর্থকেরা দলের আগে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় এগিয়ে দিচ্ছেন, এমন দৃশ্য আগে দেখেনি নন্দীগ্রাম। সম্ভবত এ রাজ্যেও! যা এ দিন দেখা গিয়েছে বয়ালে।

পুলিশ ও বাহিনীর নিরাপত্তায় বয়াল থেকে বাইরে বেরিয়ে মমতা জানান, তাঁরা ৬৩টা অভিযোগ করেছেন। বিহার ও উত্তরপ্রদেশের গুন্ডা এনে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করে এবং কমিশনের ‘নীরবতা’কে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘দয়া করে দেখবেন, পরের পর্বে ভোটে আর যেন এটা না হয়।’’ বয়াল থেকে বেরিয়ে নন্দীগ্রাম বিডিও অফিসের পাশে তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়ে বসেন মমতা। যান ভাঙাবেড়া ও ওসমানচকে। সেখানে সমথর্কদের বিপুল অভ্যর্থনা ছিল তাঁর জন্য। ভোট শেষে রাতে তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট সুফিয়ানের দাবি, ‘‘নানা রকম অসভ্যতার চেষ্টা হয়েছে। তবে মানুষ দিদির সঙ্গেই ছিলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement