শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা।
শীতলকুচির ঘটনায় রাজ্যের তরফেও পুরদস্তুর তদন্ত করা হবে, জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনকে দেওয়া রিপোর্টে কেন্দ্রীয় বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে বলে যে যুক্তি খাড়া করা হয়েছে, তা একরকম খারিজ করেই মমতার প্রশ্ন, ‘‘যদি তা-ই হবে, তা হলে সেই প্ররোচনার প্রমাণ কোথায়?’’
চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন। রাজ্যে ভোটের বিশেষ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে তাঁর রিপোর্টও পেশ করেছেন কমিশনের কাছে। তবে কমিশন তদন্ত করলেও তার ভরসায় থাকতে নারাজ মমতা। কারা, কীভাবে এটা করল তা জানতে শনিবার রাজ্যের তরফে আলাদা ভাবে সিআইডি তদন্ত করার ঘোষণা করেন তিনি।
শনিবার শিলিগুড়িতে শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতার। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘মানুষের জীবন নিয়ে যেখানে খেলা হচ্ছে আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এখনও আমার নির্বাচিত সরকার আছে। আগামী দিনেও থাকবে। আমি সিআইডি তদন্ত করে দেখব কারা কীভাবে এটা করল।’’
নির্বাচনের সময় রাজ্যের পুলিশ কমিশনের অধীন। তবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আগেই মমতা বলে দেন, ‘‘আমি নিজেদের তরফেই এটা করব। কমিশন হয়তো বলবে আমি আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি। কেউ কেউ তর্কের খাতিরে বলবেন, আমি এটা করতে পারি না। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এ ভাবে একের পর এক মৃত্যু দেখেও আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না।’’ অর্থাৎ কমিশন তদন্ত করলেও তার সমান্তরাল তদন্ত করবেন মমতাও।
শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে কমিশনকে দেওয়া রিপোর্টে বিবেক জানিয়ছিলেন আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের ঘেরাও করে তেড়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় গুলি চালাতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। যদিও বিবেকের এই জবাব আর কেন্দ্রীয়বাহিনীর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি ছা়ড়া বাংলার প্রায় সব রাজনৈতিক দল। প্রশ্ন উঠেছে, সেক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের পায়ে গুলি চালানো হয়নি কেন। প্রাণহানি না করেও তাদের নিরস্ত করতে পারত কেন্দ্রীয় বাহিনী।
যদিও বিজেপি এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুঃখপ্রকাশ করেই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। এমনকি শিলিগুড়ির এক সভায় গুলি চালানোর কারণ হিসেবে আত্মরক্ষার যুক্তিটিকে সমর্থন করেছেন তিনিও। শুক্রবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো মানে কি? কেউ কি জখম হয়েছে? কারও কোথাও আঘাত লেগেছে। আমি তো শুনেছি ওখানে কয়েকটা ছেলে ছিল। তারা ছবি তুলেছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের ছবিগুলিও ডিলিট করিয়েছে।
শীতলকুচির ঘটনায় আসলে কী হয়েছিল তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘‘যদি গ্রামবাসী প্ররোচনাই দেবে, তাহলে তার কোনও প্রমাণ নেই কেন? গ্রামবাসীরা কেন্দ্রীয়বাহিনীকে ঘেরাও করল, তাদের রাইফেল ছিনিয়ে নিল অথচ তার একটাও ছবি নেই।’’ সংবাদমাধ্যমকেও এব্যাপারে প্রশ্ন করেন মমতা। বলেন, ‘‘আপনারাও তো ছিলেন ওখানে। এত চ্যানেল, এত ক্যামেরা। তাহলে তাদের কাছেও এই ঘটনাটির ছবি নেই কেন?’’ এরপরই আত্মরক্ষার তত্ত্ব খারিজ করে রাজ্যের তরফে সিআইডি তদন্তের ঘোষণা করেন মমতা।