মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের কর্মিসভায় মমতা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত রবিবার ব্রিগেডে বলেছিলেন, আর খেলা হবে না। এ বার খেলা শেষ হওয়ার পালা। তার পাল্টায় মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণ। সেখানে খেলাও হবে, দেখাও হবে এবং জেতাও হবে। পয়লা এপ্রিল ভোটবাক্সে বিজেপি-কে ‘এপ্রিল ফুল’ করতেও নন্দীগ্রামবাসীকে আহ্বান জানালেন নন্দীগ্রামের তৃণমূলপ্রার্থী মমতা।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামেরই তেখালি মাঠে জনসভা করেন মমতা। সেখানে তৃণমূলনেত্রী ইচ্ছাপ্রকাশ করেন, তিনি নন্দীগ্রাম থেকেই ভোটে লড়তে চান। এর পর গত শুক্রবার দলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে তৃণমূল। সেই প্রার্থিতালিকা ঘোষণার সময় মমতা জানিয়ে দেন, তিনিই নন্দীগ্রামে দলের প্রার্থী। তার পর মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে এলেন মমতা। বুধবার এখান থেকেই হলদিয়ায় গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা তাঁর। তার আগে মঙ্গলবার দলের কর্মিসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘১ এপ্রিল এখানে ভোট আছে। ওদের এপ্রিল ফুল করে দেবেন। টাকা দিলে, টাকাটার কী করতে হয় আপনারা জানেন। কিন্তু ভোটের বাক্সে এপ্রিল ফুল করে দেবেন। ২ মে যে দিন ফল বেরোবে, সে দিন বুঝতে পারবে ওরা।’’
নীলবাড়ির লড়াইয়ে ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের জায়গা নন্দীগ্রাম’-এ যে খেলা জমবে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এই মেদিনীপুর স্বাধীনতা আন্দোলনের জায়গা। প্রথম দফাতেও এখানে নির্বাচন রয়েছে। বলরামপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও ভোট রয়েছে।’’ এর পরেই আগত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে খেলা হবে? ভয় দেখালে ভয় পাবেন? টাকা দিলে ভোট দেবেন? চমকালে ভোট দেবেন?’’ তাঁর এই প্রশ্নে যখন দলের কর্মী-সমর্থকেরা সমস্বরে ‘না’ বলছেন, তার প্রত্যুত্তরে মমতা বলেন, ‘‘ঠিক বলছেন তো? তা হলে ১ এপ্রিল খেলা হবে। দেখা হবে, জেতা হবে। তৃণমূল জিতবে।’’
এই মুহূর্তে রাজ্যে সিপিএম-কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মধ্যে কোনও ফারাক নেই বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় নন্দীগ্রামের মানুষের উপর যাঁরা দমন-পীড়ন চালিয়েছেন, সেই লক্ষ্ণণ শেঠ এবং তাঁর বন্ধুদের ফিরিয়ে এনেছে বিজেপি। সকলে মিলে নতুন করে অত্যাচার চালাননোর পরিকল্পনা করছে।’’ নন্দীগ্রামবাসীকে তাঁদের এলাকায় ঢুকতে না দেওয়ার আর্জি জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘থানা-পুলিশ এবং মামলার ভয় দেখালে বলবেন, আর দু’মাস যা করার করে না-ও। ৭-১০ দিন পর কোথায় যাবে ভেবে নাও।’’
মমতার এক সময়ের সহযোদ্ধা শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপিতে। শুভেন্দুই নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রার্থী। বিভিন্ন প্রচারসভা বা জনসভায় মমতার বিরুদ্ধে ‘বাক্যবাণ’ ছুড়ছেন শুভেন্দু। প্রধানমন্ত্রীও গত রবিবার ব্রিগেড থেকে তৃণমূলনেত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘মমতার স্কুটি নন্দীগ্রামে গিয়ে পড়ে গেলে আমাদের কী করার আছে!’’ মমতা মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম থেকে পাল্টা বলেন, ‘‘ভোটগণনার পর জিভের জোর কোথায় থাকে দেখব।’’