নলহাটিতে ভোটকর্মীদের ভিড়। বুধবার। ছবি: তন্ময় দত্ত
জেলায় করোনা সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী। তার মধ্যেই আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যের শেষ দফার বিধানসভা নির্বাচনে নামতে চলেছে বীরভূম। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় নাজেহাল বীরভূমে কোভিড-বিভি মেনে আজ ঠিকমতো ভোট করানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জেলা প্রশাসনের। কারণ, প্রায় ২৮ লক্ষ ভোটারের আজ বুথে বুথে ভোট দিতে যাওয়ার কথা।
নির্বাচনী যুদ্ধে নামার জন্য ভোটকর্মী থেকে শুরু করে ভোটারদের জন্য, এমনকি বুথগুলিতেও ভোটের আর পাঁচটা নিয়মবিধির সঙ্গে কোভিড সচেতনতা কার্যকর করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। তবে, নির্বাচনের আগের দিন জেলার তিন মহকুমাতেই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ডিসিআরসি-তে ভোটকর্মীদের ভিড়ে পারস্পরিক দূরত্ব বিধি আর মানা যায়নি।
ভোটকর্মীদের পাশাপাশি ভিড় ছিল পুলিশ, বাস চালক বা অন্যান্য গাড়ির চালক ও কর্মীদের। অনেকের মুখেই মাস্ক থুতনিতে ঝুলতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে, ভোকর্মীদের একাংশ এখন সংক্রমণের ভয়ে কাঁটা।
নলহাটির এক মহিলা ভোটকর্মী বলেন, ‘‘যা অবস্থা, তাতে করোনা নিয়েই বাড়ি যেতে হবে মনে হচ্ছে। প্রথমবার ভোটের কাজে এসেছি। দূরত্ব বিধি না মেনে কে কত তাড়াতাড়ি ভোট সামগ্রী নিয়ে বুথে যাবেন, তার যেন প্রতিযোগিতা দেখলাম।’’
সিউড়ি ডিসিআরসি থেকে সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকায় ভোটের দায়িত্বে যাওয়ার আগে অনেকেই বলছেন, ‘‘চূড়ান্ত অব্যবস্থা। এত সংক্রমণের মধ্যেও দূরত্ব মানার কোনও উপায় ছিল না।’’ নলহাটি ডিসিআরসি-র অনেক ভোটকর্মীর বক্তব্য, ‘‘কমিশন ও প্রশাসন ভোট সরঞ্জাম নেওয়ার যে ব্যবস্থা করেছিল, তা একটু দূরে দূরে হলে ভাল হত। ছবিটা খুব একটা আলাদা ছিল না বোলপুর ও রামপুরহাটেও।
কয়েক জন বললেন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত বাড়িতে সতর্কতার মধ্যে ছিলাম। ভোটের কাজে এসে যে ভাবে সচেতনতার অভাব দেখলাম, তাতে ভয় ভয় লাগছে।’’ নাম প্রকাশে প্রশাসনের এক আধিকারিকের আক্ষেপ, ‘‘দূরত্ব বিধি মেনে চলার জন্য মাইকে বারবার প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু, ভোটকর্মীদের একটা অংশ শুনতে তো!’’ অন্য দিকে,
যদিও জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, ‘‘সকল ভোটকর্মী তাঁদের বুথে পৌঁছেছেন। ডিসিআরসি-তে যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা হয়েছে কোভিড বিধি কথা খেয়াল রেখে। অব্যবস্থার অভিযোগ আছে বলে শুনিনি। ভোটদানেও কোভিড বিধি মানার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
জেলা নির্বাচন দফতরের আধিকারিক প্রলয় মণ্ডল জানান, জেলার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৩ হাজার ৯০৮ টি বুথের প্রতিটিতে ৪ জন করে ভোটকর্মীর জন্য কোভিড বিধি সংক্রান্ত যাবতীয় সরঞ্জাম জোগান দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য ভোটকেন্দ্রে থাকবেন আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভোটারদের হাতে দস্তানা, মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়া হবে।
ভোটদানের পরে সেগুলি ফেলার জন্য নির্দিষ্ট বাক্স প্রতি বুথে দেওয়া হয়েছে। ভোটকর্মীদের জন্য কোভিড সুরক্ষা ব্যবস্থাও থাকছে। ২০ শতাংশ ভোটকর্মীকে ‘রিজার্ভ’-এ রাখা হয়েছে। তাঁদের জন্যও কোভিড বিধি সংক্রান্ত যাবতীয় সরঞ্জাম জোগান দেওয়া হয়েছে।
মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) জগন্নাথ ভড় জানান, এই মহকুমায় ১৬৭৫ বুথেই সেক্টর অফিসারদের মাধ্যমে ভোটারদের জন্য এক হাতের দস্তানা, ১৫০টি মাস্ক (যে সব ভোটার মাস্ক পরে আসেনি, তাঁদের দেওয়ার জন্য), দু’লিটার করে স্যানিটাইজার, একটি করে থার্মাল গান, একটি করে ডাস্টবিন এবং চারটি করে পিপিই কিট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার ডিসিআরসি থেকে প্রতি বুথের চার জন ভোটকর্মীর জন্য ফেস শিল্ড, মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান দেওয়া হয়েছে।