শেখ ইমরান আলি (বাঁদিকে)।
এক দিন আগেই হয়েছিলেন অপহৃত। ছাড়া পেয়ে রাতে বলেছিলেন, এভাবে ভয় দেখানো যাবে না। ওই ঘটনার পরদিন শনিবার সকালেই কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে তৃণমূল নেতা কুরবান শা হত্যা মামলায় যোগ দিলেন সাক্ষী তথা কুরবানের ব্যক্তিগত সহায়ক শেখ ইমরান আলি।
শুক্রবার তমলুক আদালতে যাওয়ার পথে পাঁশকুড়ার জানবাড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ইমরান এবং তাঁর সঙ্গে থাকা গাড়ির চালক কমল মণ্ডলকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে। ইমরানদের দাবি, কুরবান শা মামলার মূল অভিযুক্ত জেলবন্দি আনিসুর রহমানের অনুগামীরাই তাঁদের অপহরণ করেছিল। ইমরানরা যাতে আদালতে পৌঁছতে না পারে, সে জন্য প্রায় ঘণ্টা সাতেক ধরে তাঁদের গাড়িতে করেই পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়ার বিভিন্ন অংশে ঘোরানো হয়েছিল। বিকেলে রাস্তায় পুলিশ দেখে ইমারনদের গাড়িতে রেখে দিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয় বলে দাবি। এ দিন কুরবানের দাদা আফজল শা তমলুকের আইসির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, জেলে বসেই আনিসুর ওই অপহরণ-কাণ্ডের ব্লু-প্রিন্ট বানিয়েছে।
দুষ্কৃতীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে ইমরান ও কমলকে আনা হয়েছিল পাঁশকুড়া থানায়। জিজ্ঞাসাবাদ-সহ সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ রাত ১১টা নাগাদ ইমরানদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। কয়েক ঘণ্টা পরে এ দিন ভোরেই কলকাতা হাইকোর্টের উদ্দেশে রওনা দেন ইমরান। হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে এ দিন কুরবান হত্যা মামলার শুনানি ছিল। এ দিন শুনানির পর আগামী বুধবার হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ ফের মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে।
অন্যদিকে, শুক্রবারের অপহরণ কাণ্ডে পুলিশ শেখ হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল। এ দিন তাকে তমলুক আদালতে তোলা হয়। পুলিশ হাবিবুরের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানায়। বিচারক তার চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলায় ভোটের প্রচার পর্ব থেকে নতুন মাত্রা নিয়েছে কুরবান মামলাটি। মাঝে মামলাটি প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতাতেও শোনা গিয়েছিল আনিসুরের পক্ষে সওয়াল। তখন থেকেই কুরবানের দাদা আফজল অভিযোগ করছেন যে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আনিসুরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। শুক্রবারের ঘটানা আনিসুরের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে অভিযোগ আফজলের। এ নিয়ে তিনি তমলুকের আইসির কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘অসুস্থতার দোহাই দিয়ে আনিসুর জেলের পরিবর্তে দিনের পর দিন তমলুক হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন তার অনুগামীরা দেখা করতে যাচ্ছে। হাসপাতালে বসে আনিসুর মোবাইল ব্যবহার করছে, তার প্রমাণও রয়েছে। হাসপাতালে বসেই অনুগামীদের নিয়ে ইমরানদের অপহরণের ছক কষেছিল আনিসুর। হাসপাতালে আনিসুরের অনুগামীদের আনাগোনা বন্ধ করতে তমলুকের আইসিকে আমি চিঠি দিয়েছি।’’
ইমরাণ-অপহরণ কাণ্ডে পুলিশ এখনও বাকি অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘অপহরণেশেখ হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। আফজল শার অভিযোগের ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না। অভিযোগ হাতে পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’