সকালের রুটিনটা তাঁর ৪৭ বছরেও পাল্টায়নি।
গুড়-মুড়ি খেয়ে বেরিয়ে পড়া। তারপর ঘুরে ঘুরে জনসংযোগ।
১৯৮২ সালে প্রথমবার বিধায়ক হওয়ার আগে যেমন ছিলেন, আজও তেমনই আছেন শিবপ্রসাদ মালিক। বয়স ৬৪ হল। সাদামাটা জীবনযাপনেই স্বচ্ছন্দ গোঘাটের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী শিবপ্রসাদ মালিক। বেশির ভাগ মানুষ যাঁকে ‘শিবুদা’ নামেই বেশি চেনেন। তাঁর একটাই পরিচয়, ‘সৎ, ভদ্রলোক’।
দলমত নির্বিশেষে সকলেই মানছেন, টানা ২৫ বছর বিধায়ক থাকলেও মানুষটির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। সেই চিরাচরিত ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ান। অনেকে এ-ও দাবি করেছেন, এখনও পর্যন্ত বিধায়কদের মধ্যে সবচেয়ে তাঁকেই সহজে পাওয়া গিয়েছে। তাঁর কাছে কেউ কোনও প্রয়োজনে গেলে শিবপ্রসাদবাবু নিজে থেকেই খবর রাখেন, সেই ব্যক্তির প্রয়োজন মিটেছে কিনা।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও দিন ওঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা যায়নি। সৎ লোক। সকলের সঙ্গে মেশেন। বিরোধী দলেরও কেউ সই-সাবুদে গিয়ে ফিরে এসেছেন বলেও কোন অভিযোগ নেই। হাসি মুখে নিজে ডেকে কথা বলেন। রাজনীতিতে এমন ব্যক্তিত্ব বিরল।”
‘‘আজ পর্যন্ত গোঘাটের একজন মানুষও ওঁর বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে পারেননি’’— বলছেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ভাস্কর রায়।
১০ বছর বয়সে ফরওয়ার্ড ব্লকের ভূমি আন্দোলনের পোস্টার মারা দিয়ে শিবপ্রসাদবাবুর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। গোঘাট বিধানসভা বরাবর ‘রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত। ষাটের দশকে ভূমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সংঘর্ষ নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। ১৯৭৭ সালে বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৮২ সাল থেকে এখানে ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএমের সম্পর্কে ফাটল ধরে। তারপর বহু ক্ষেত্রে দুই বাম শরিকের সংঘর্ষ হয়েছে। তৃণমূলের উত্থানের পরে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বামেদের।
কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই কোনও দল শিবপ্রসাদবাবুর নাম জড়ায়নি। এমনকি, কোন সমবায় সমিতির ভোট বা বিধানসভা নির্বাচনের অশান্তিতে বিরোধী দলের ছেলেরা তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, এমন নজিরও আছে। শিবপ্রসাদের কথায়, ‘‘ “আমি এখনও দলের সর্বক্ষণের অনুগত কর্মী। হিংসা, লোভ নেই। বেশ ভালই আছি।”
তাঁর সততা নিয়ে কারও দ্বিধা না থাকলেও এলাকা উন্নয়নের কাজ নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকে মনে করেন, বিধায়ক থাকার সময়ে তাঁর স্বাধীন ভাবে কাজ করার হিম্মত ছিল না। তিনি সিপিএমের হাতের পুতুল ছিলেন। অনেকে আবার পাল্চা দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, গোঘাটে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর সূচনা শিবপ্রসাদবাবুই করেছেন। যেমন, ১৯৯২ সাল
নাগাদ দলকার জলা সংস্কারের জন্য সেচ দফতরের জরিপের কাজ।
যদিও আর্থিক অনুমোদন না-মেলায় তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ১৯৯৫ সাল নাগাদ জলবিভাজিকা প্রকল্পে এক কোটি টাকা অনুমোদন মেলার পর কিছু খাল সংস্কার। প্রচুর গ্রামে
বিদ্যুৎ এবং রাস্তা।