প্রতীকী ছবি।
একটা গুরুগম্ভীর বক্তৃতার চেয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক গান কয়েক গুণ বেশি কার্যকর। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সেই অস্ত্রই প্রয়োগ করছে সিপিএম তথা বামপন্থীরা।
কমিউনিস্ট পার্টির সভা-সমাবেশে এখনও গণসঙ্গীত বা অন্যান্য গান শোনা যায়। কিন্তু এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্যারডি। তাতে রয়েছে নিখাদ রাজনৈতিক কথা। শ্লেষে-বিদ্রুপে-ব্যঙ্গে বিপক্ষ বিজেপি ও তৃণমূলকে তুলোধোনা করা হচ্ছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাম-কংগ্রেসের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে ‘তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব টুম্পা’ প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই আদলেই এ বার ভোট-প্রচারেও ইতিমধ্যেই ‘বিজেমূল’, ‘টুম্পা, তোকে নিয়ে ভোট দেবো’ রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। খুব শীঘ্রই এই ধরনের আরও কয়েকটি গান প্রকাশের সম্ভাবনা আছে বলে সূত্রের খবর। প্রবীণ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থেকে। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের জন্য এই ধরনের গানও বাজারে ছেড়ে দিয়েছে বামেরা।
অনেক দিনে পরে সিপিএমের অভিনব নির্বাচনী প্রচার রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বাম শিবিরের যুক্তি, বহু মানুষের ভাললাগা কোনও গানের সুর ও ছন্দে, কথার কাঠামোয় প্রচার-সঙ্গীত তৈরি করে আম জনতার কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই গানগুলিতে নির্ভেজাল রাজনৈতিক বার্তা থাকছে। কোনও চটুল কথা বা উস্কানিমূলক কিছু নেই। সিপিএম কর্মী তথা প্যারডির অন্যতম রচয়িতা রাহুল পালের কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে চাইছি এই প্যারডির মাধ্যমে। মানুষ গ্রহণ করেছেন। গণসঙ্গীত সব কালজয়ী গান। তার প্রাসঙ্গিকতাও চির দিনের। তার পাশাপাশি আজকের প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে আমরা এটা করে দেখছি। আমাদের কথায় রাজনীতির বাইরে কিছু নেই।’’
ভোটের বাজারে তৃণমূলের মিছিল-সভায় এখন রীতিমতো ডিজে-সহযোগে এখন বাজছে ‘খেলা হবে’। আবার গত শতকে ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির ব্যবহার করা লোকসঙ্গীত ‘বেল্লা চাও’-এর আদলে বিজেপি তৈরি করেছে ‘পিসি যাও’। কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের মতে, বৈচিত্রে এবং বক্তব্যের তীক্ষ্ণতায় বাম প্যারডি এ সবের
থেকে এগিয়ে।
বাম শিবিরের বক্তব্য, এই প্যারডিগুলির কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন, ‘তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব টুম্পা’ প্যারডিটি ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারের জন্য তৈরি করা। সেটা আর ভোট-প্রচারে ব্যবহার হবে না। এই প্যারডিগুলি তৈরি হচ্ছে এক একটি প্রেক্ষিত ধরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিপিএম জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলছেন, ‘‘মূলত প্রচারমূলক গান। আসলে এর মূল বিষয় হচ্ছে কথাগুলি। প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলি তো আমাদের কথা বলবে না। তাই আমাদের কথাগুলি এই গানের আকারে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা তা
গ্রহণও করছেন।’’
প্যারডির মাধ্যমে প্রচার নিয়ে সিপিএম-কে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল ও বিজেপি। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের খোঁচা, ‘‘সিপিএমে এখন গণসঙ্গীত লেখার লোক নেই, গাওয়ারও লোক নেই। তাই প্যারডি বানাচ্ছে। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে সিপিএমের গণসংগঠনে লোকজন নেই, তো গণসঙ্গীত আর কে গাইবে!’’ আর বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বিদ্রুপ, ‘‘বামপন্থীরা গৃহীত, পরীক্ষিত ও পরিত্যক্ত। এখন বেলা শেষে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বাঁচিয়ে রাখতে চটুল গান আঁকড়ে ধরেছেন। এর পরিণতি অতীতে যা হয়েছে, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও তা-ই হবে।’’ এ নিয়ে সিপিএমের শমীকের পাল্টা, ‘‘আমাদের প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা, তা তো কয়েক দিন পরেই বোঝা যাবে। যারা ভোটের টিকিট না পেয়ে পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দেয়, তারা ক্ষমতায় এলে কী কী জ্বালাবে, তা তো কল্পনাই করা যায় না!’’