কমল মণ্ডল এবং শেখ ইমরান আলি । নিজস্ব চিত্র।
বায়োসায়েন্সে স্নাতক। প্রত্যন্ত এক গ্রামের বাসিন্দা। কোনও ধনী পরিবারের সন্তান নন। করেন টিউশন। বছর সাঁইত্রিশের এমনই এক যুবক শেখ ইমরান আলিকে শুক্রবার অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি হঠাৎ কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন অপহরণকারীদের কাছে!
এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পাঁশকুড়ার মাইশোরাবাসীর কাছে আজানা নয়। ইমরান ছিলেন ২০১৯ সালে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত তৃণমূল নেতা কুরবান শার ব্যক্তিগত সহায়ক। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ওই কাজ করছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন সক্রিয় রাজনীতিতে। কুরবানের মৃত্যুর পর এই ইমরানই হন ওই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী। কুরবানের দাদা আফজল শা ইমরানের মতো আস্থাভাজনকে দিয়েই মামলার যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেন। জেলা আদালত থেকে কলকাতা হাইকোর্ট— সমস্ত জায়গায় শুনানির দিন মামলার ফাইল নিয়ে সশরীরে হাজির থাকেন ইমরান।
ইমরান জানাচ্ছেন, গত ১৩ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কুরবান হত্যা মামলাটিকে ফের সিঙ্গেল বেঞ্চে পাঠান শুনানির জন্য। ওই দিনের রায়ের কপিকে হাতিয়ার করে শুক্রবার নিম্ন আদালতে জামিনের জন্য উঠে পড়ে লাগেন ওই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের আইনজীবীরা। শুক্রবার আদালতে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত নথি নিয়ে হাজির হওয়ার কথা ছিল ইমরানের। তাঁর দাবি, তাঁকে পথে আটকে দিলে জামিন হয়ে যাবে ভেবেই হয়তো আনিসুরের লোকজন তাঁকে এবং গাড়ির চালক কমলকে অপহরণ করে।
জানবাড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে অপহরণস্থল। নিজস্ব চিত্র।
এ দিনের আরেক অপহৃতও কুরবানের পরিবারের সঙ্গে কাজ করছেন বছর খানেক ধরে। মাইশোরার বাসিন্দা কমল মণ্ডল আফজলের গাড়ির চালান। মামলার দিনগুলিতে তিনিই ইমরানকে নিয়ে যান আদালতে। মাইশোরার এই দুই বাসিন্দাকে এ দিন অপহরণের প্রায় সাতঘণ্টা পরে পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের সদস্যের অক্ষত থাকার খবরে স্বস্তি পেয়েছেন তাঁদের পরিজন। তবে দিনের শেষে বিধ্বস্ত ইমরান বলছেন, ‘‘এভাবে আমাকে ভয় দেখানো যাবে না। আমরা বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখে মামলা লড়ে চলেছি। আগামী দিনেও এ আইনি লড়াই জারি থাকবে।’’