অন্য রূপে। খড়গপুরে ডাস্টবিনে পাতা ফেলছেন হিরণ। ক্যারম খেলছেন ভারতী ঘোষ। দোকানে ক্রেতাদের চা দিচ্ছেন জুন মালিয়া। —নিজস্ব চিত্র
ভোটের বাজারে আম জনতার হেঁশেলে পৌঁছতে কসুর নেই প্রার্থীদের। শুধু পৌঁছে যাওয়াই নয়, এক্কেবারে মিশে যাচ্ছেন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে। ভোটারদের মন জয়ের এমন ছবি রোজই ধরা পড়ছে রাজ্যের আনাচে কানাচে। শুক্রবার দিন ভর তেমনই ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন প্রান্তে। তৃণমূলের তারকা প্রার্থী জুন মালিয়া যেমন এক ভোটারের বাড়িতে রান্না করলেন। বিজেপির হিরণ আবার রাস্তার আবর্জনা কুড়িয়ে ফেললেন ডাস্টবিনে। ভারতী ঘোষ খেললেন ক্যারম।
মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী জুন মালিয়া শুক্রবার প্রচারে আসেন শালবনি ব্লকের পিরাকাটা এলাকায়। সেখানকার ৭ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পরিমল ধলের বাড়িতে গিয়ে সটান ঢুকে পড়লেন রান্না ঘরে। পরিমলের স্ত্রীকে সরিয়ে পিঁড়ি পেতে নিজেই শুরু করলেন আলু ভাজতে। রান্না করলেও নিজে অবশ্য খাননি। বাড়ির মালিক পরিমল বলেন, ‘‘উনি তো বেশ ভাল রান্না করতে পারেন। খাবার খুব সুস্বাদু হয়েছিল।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্ন সময়ে চায়ের দোকানে ঢুকে চা বানাতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। দলনেত্রীর অবতারেই পাওয়া গেল জুনকেও। সন্ধ্যার পর মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মোড় এলাকায়। ‘শম্ভুদা’র চায়ের দোকান নামে পরিচিত দোকানে। শুধু চা তৈরি নয়, ক্রেতাদের হাতেও তুলে দিয়েছেন নিজেই। টাকা অবশ্য নিয়েছেন দোকানদার।
অন্য দিকে খড়গপুর শহরে শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ভোট প্রচার শুরু করলেন অভিনেতা প্রার্থী হিরণ। তিনি এ বার খড়গপুর সদর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। খড়গপুরেই দলীয় কর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। খাওয়াদাওয়ার পর বেশ কিছু উচ্ছিষ্ট পাতা রাস্তার উপর পড়ে যায়। তা দেখতে পেয়ে নিজেই সেই সহ এঁটো পাতা তুলে ফেলেন ডাস্টবিনে। দলেরই কর্মীদের ভুল শোধরাতে ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানে নেমে পড়েছেন খোদ প্রার্থী, এতে কর্মীদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তির ছবিও ধরা পড়েছে শুক্রবার।
এ বারের ভোটে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’। শুক্রবার ‘খেলা’য় অংশ নিলেন ডেবরার বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। তবে প্রত্যক্ষ রাজনীতির খেলা নয়, ক্যারম খেলায়। শুক্রবার দিন ভর প্রচার অভিযানের পর ডেবরার মারতোলা এলাকায় কালীপুজোর অনুষ্ঠানে হাজির হন তিনি। পুজোর পাশেই একটি জায়গায় তখন চলছিল ক্যারাম খেলা। ভারতী নিজেই এগিয়ে যান সেখানে। কয়েক জন তাঁকে অনুরোধ করেন ক্যারাম খেলার জন্য। অনুরোধ ফেলতে পারলেন না ভারতী। স্ট্রাইকার হাতে নিয়ে ছুটলেন গুঁটির পিছনে। পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সারা দিনের মধ্যে সেরা সন্ধ্যায় এই ক্যারাম খেলা।’’ একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, ‘‘লাল গুটির পেছনে পড়ে না থেকে নিজের গুটি আগে ফেলার চেষ্টা করতে হয় ক্যারমে।’’ তার মধ্যে আবার কোনও রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও একাংশের মধ্যে জল্পনা। তবে প্রার্থীদের এই ঘরের মানুষ, কাছের মানুষ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত।