প্রতীকী ছবি।
নদী অববাহিকার উর্বর মাটি এলাকায় কৃষির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। কিন্তু এক যুগ আগে প্রতিশ্রুতি দিলেও পটাশপুরে নদীর উপর তৈরি হয়নি সেতু। ‘দুয়ারে সরকার’ এবং উন্নয়নের খতিয়ান নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল জনতার দরবারে এলেও শুক্রবার দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে ক্ষোভে ফুটছেন পটাশপুরের স্থানীয় নেতৃত্ব। পুরনো প্রার্থী সারিয়ে ‘বহিরাগত’ নতুন প্রার্থী আনা তৃণমূলের কাছে বুমেরাং না হয়ে যায়, সে নিয়ে ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক মহলকে।
পটাশপুরে নদী কেন্দ্রীক এলাকায় তিন ফসলী জমিতে ধান, আনাজ এবং একাধিক বাণিজ্যক ফসল চাষ করেন কৃষকেরা। কেলেঘাই নদী, বাগুই খাল, বারচৌকা বেসিন এলাকায় উর্বর পলি মিশ্রিত দোঁয়াশ মাটি কৃষি কাজের জন্য আদর্শ। কিন্তু এই কৃষি কাজেও সরকারি বঞ্চনার অভিযোগ এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি। পটাশপুর-১ ব্লকে একটি কৃষক বাজার রয়েছে। সেটি সারা বছর ফাঁকা হয়ে পড়ে থাকে। শুধু সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার সময় কৃষকেরা ধান বিক্রির জন্য ওই বাজারে আসে। পটাশপুর-২ ব্লক এখনও কৃষক বাজার হয়নি। সরকারি সেচ পাম্প না থাকায় ব্যক্তিগত পাম্প ভাড়া করতে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয় পটাশপুরের চাষিদের।
এলাকায় তামা, পিতলের বাসন তৈরি, মাদুর, শঙ্খ, তাঁত শিল্পও কৃষির সমান্তরালভাবে জনপ্রিয়। কিন্তু অভিযোগ, গত দশ বছরে এই শিল্পীদের উল্লেখ যোগ্য ভাবে কোনও উন্নতি হয়নি। নির্বাচন ঘোষনার আগে শুধু মাত্র কিছু শিল্পীদের সরকারি পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ শিল্পীদের সরকারি ভাতাও হয়নি। এছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে সংযোগের জন্য কেলেঘাই নদীর উপরে পাকা সেতু না থাকায় ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। যদিও কেলেঘাই নদী ও বাগুই খাল সংস্কার করে পটাশপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী সমাধান করেছে তৃণমূল সরকার।
স্থানীয়দের অভাব অভিযোগ প্রসঙ্গে পটাশপুর-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মৃণালকান্তি দাস বলছেন, ‘‘মমতা ব্যান্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন হাতিয়ার করে আমরা মানুষের কাছে গিয়েছি। মানুষ পটাশপুরে তৃণমূলকে ফের শক্ত করবে। বিরোধীদের কুৎসা কোনও কাজ দেবে না।’’
বিধানসভা কেন্দ্র পটাশপুরে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ২০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়। তবে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে সেখানে তৃণমূলের লিড কমে ১০ হাজারে নেমে আসে। উঠে আসে বিজেপি। দুই দলের মধ্যে গত কয়েকমাসে একাধিক রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে।
এমন আবহে পটাশপুরের কোনও বাসিন্দাকে তৃণমূলের প্রার্থী না করায় দলের গোষ্ঠী কোন্দলে বিজেপি’র সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বর নির্বাচনে নিষ্ক্রিয় থাকার সম্ভাবনার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এতে উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির। ফলে ২৯ মার্চ পটাশপুর বিধানসভায় তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা যাবে জানাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পটাশপুরের বিজেপি নেতা সুকান্ত প্রধান বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতি ও সন্ত্রাস প্রতিটি মানুষের মুখে ঘুরছে। কৃষকদের কোনও উন্নতি হয়নি। কেলেঘাই নদীতে সেতু হয়নি। মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারলে তৃণমূল পটাশপুরের বিপুল ভোটে পরাজিত হবে।’’