কোটিপতি বললেও কম বলা হয়। কিন্তু দামি গাড়ি, নামী ব্র্যান্ডের জামা, জুতো বা বিদেশভ্রমণ— কোনও বিলাসিতাই নেই তাঁর। শখ বলতে শুধু একটাই, আর তা হল ‘হেভিওয়েট’ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ভোটে নামা। তিনি বিনয়কুমার দাস। নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গের করণদিঘির প্রার্থী। বাংলায় ভোটের বাজারে এই মুহূর্তে ‘হটকেক’ তিনি।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে এ বার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ এবং করণদিঘি কেন্দ্র থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিনয়। রায়গঞ্জ থেকে তাঁর মনোনয়ন যদিও খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে করণদিঘি থেকে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কমিশনের সায় জোগাড় করে ফেলেছেন তিনি।
কমিশনে যে দু’টি আলাদা আলাদা হলফনামা জমা দিয়েছেন বিনয়, তাতে নিজের নামে যথাক্রমে ১০০ এবং ৫৪.৯৬ একর জমি দেখিয়েছেন তিনি। যে হলফনামায় ১০০ একর জমির উল্লেখ করেছেন, সেখানে তিনি ৬৫০ কোটি ৮২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার মোট সম্পত্তির কথা বলেছেন। অন্য দিকে ২২ কোটি ৩৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা দাম দেখিয়েছেন সেই হলফনামায় যেখানে ৫৪.৯৬ একর জমির কথা বলেছেন।
পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে ওই জমি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিনয়। ওই বিপুল পরিমাণ জমির একটা বিশাল অংশ জুড়ে আমবাগান রয়েছে তাঁর। বাংলা ছাড়াও অসম, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানাতেও বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে বিনয়ের। সব মিলিয়ে তার বাজারমূল্য ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তবে এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করেন বিনয়। উত্তর দিনাজপুর জেলাশাসকের দফতরে করণিকের কাজ করেই সংসার চালাতেন তিনি। ২০০৫ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। তার পরেও বিলাসিতায় গা না ভাসিয়ে সাধারণ ভাবেই জীবন যাপন করেন বিনয়।
রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ার বাসিন্দা বিনয়। রায়গঞ্জ তো বটেই, মালদহ, জলপাইগুড়ি, বারাণসী এবং হরিয়ানার একটি জায়গা মিলিয়ে তাঁর নামে ১৪টি বাড়ি রয়েছে। কিন্তু নিজে আজীবন ভাড়াবাড়িতেই বাস করে এসেছেন ৭৫ বছর বয়সি বিপত্নিক এবং নিঃসন্তান বিনয়। সেটাও একরকম শখ করেই বলে জানিয়েছেন তিনি। গাড়ি বা মোটরবাইকও নেই তাঁর।
নির্বাচনে নাম লেখালেও, নির্দল হিসেবেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন বিনয়। যদিও এমসিপিআই তথা নকশাল দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলান তিনি।
তবে দীর্ঘ কাল ধরে ভোটে দাঁড়ালেও, কখনও নিজের জন্য ভোট ভিক্ষা করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে থেকে যিনি যোগ্যতম, তিনিই যেন ভোট পান, সাধারণ মানুষের দোরে দোরে গিয়ে সেই আর্জিই জানান বিনয়।
কিন্তু এত বছর ধরে যেখানে ভোটে দাঁডা়চ্ছেন, একবারও কি জিততে মন চায় না? বিনয়ের সাফ জবাব, ‘‘জিততে পারব না, তা ভাল করেই জানি। কিন্তু ভোটে দাঁড়ানোই আমার শখ। তাই প্রত্যেক বার দাঁড়িয়ে পড়ি। তবে প্রচার থেকে দূরেই থাকি।’’
এর আগে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রায়গঞ্জ জেলা পরিষদের একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিনয়। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধেও লড়েন।
শুধু তাই নয়, গনিখান চৌধুরী এবং প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিকের সঙ্গেও টক্করে নেমেছিলেন বিনয়। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নির্বাচনই সবচেয়ে ভাল শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মত তাঁর। ১৯৬৬ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক বিনয়ের বিরুদ্ধে নেই কোনও ফৌজদারি মামলাও।
তবে নিজে বামপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করলেও, বরাবরই স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত বিনয়। এই মুহূর্তে তৃণমূল বনাম বিজেপি-র লড়াইয়ে উত্তাল গোটা বাংলা। এমন পরিস্থিতিতে বামপন্থী নেতারা যখন মেপে পা ফেলছেন, তাঁর সাফ কথা, বিজেপি নয়, এই মুহূর্তে তৃণমূলকেই ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। তবে প্রার্থী হিসাবে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রায়গঞ্জে কংগ্রেসের প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্তকে পছন্দ তাঁর। করণদিঘিতে যদিও তৃণমূলের গৌতম পালকে জয়ী দেখতে চান বলে জানিয়েছেন।