Mamata Banerjee

Bengal Polls 2021: আমি বহিরাগত! মুখ্যমন্ত্রী হলাম কী করে! নন্দীগ্রামে কটাক্ষের জবাব ‘ঘরের মেয়ে’ মমতার

মমতার সভার আগে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল নন্দীগ্রামের ২ নম্বর ব্লক। যেখানে লেখা ছিল ‘বহিরাগত নয়, নন্দীগ্রাম মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রকে চায়’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২১ ২২:২৫
Share:

নন্দীগ্রামের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর আসার আগে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল নন্দীগ্রাম। যেখানে লেখা ছিল ‘বহিরাগত নয়, নন্দীগ্রাম মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রকে চায়’। নন্দীগ্রামে নিজের প্রথম নির্বাচনী কর্মসূচিতে কড়া ভাষায় তার মোকাবিলা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, দিল্লি, গুজরাত কিংবা রাজস্থান থেকে আসেননি তিনি। এই বাংলায় বড় হয়েছেন। বাংলার আকাশ-বাতাস-ক্ষেতে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর শৈশব। তাই বাংলা থেকে তাঁকে আলাদা করা যাবে না।

Advertisement

নন্দীগ্রামের জন্য বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর নামে সিলমোহর দেওয়ার পর রবিবার মমতাকে বহিরাগত বলে উল্লেখ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পর নন্দীগ্রামে স্টেট ব্যাঙ্কের পিছনে যে মাঠে মঙ্গলবার কর্মিসভা ছিল মমতার, তার সংলগ্ন ২ নম্বর ব্লকের রেয়াপাড়ার ক্ষুদিরাম এলাকা সোমবার রাতেই ছেয়ে গিয়েছিল ‘বহিরাগত’ পোস্টারে। মঙ্গলবার সকালেও সেগুলি ঝুলছিল এলাকায়। এত দিন হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার থাকলেও, এ বারে নন্দীগ্রামে নাম তুলেছেন শুভেন্দু। তাই তাঁর অনুগামীরাই ওই পোস্টার টাঙিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব তা অস্বীকার করেছেন।

তৃণমূল নেত্রীর কাছে এই পোস্টারের বিষয়টি পৌঁছেছিল কি না জানা নেই। কিন্তু মঙ্গলবারের কর্মিসভায় তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে বহিরাগত প্রসঙ্গ। কারও নাম না করে মমতা বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন, আমি নাকি বাইরের লোক। আমি বাংলার লোক হয়ে বাইরের হয়ে গেলাম! আর তুমি দিল্লির লোক বাইরের লোক হলে না! তুমি রাজস্থানের গুন্ডা, বহিরাগত হলে না! আমি বাংলার লোক। তোমার বাড়ি মেদিনীপুর, আমার বাড়ি বীরভূম। তফাত তো এইটুকুই। তোমার নন্দীগ্রাম জ্বললে আমি আসি, আমার বীরভূম জ্বললে তুমি যাও। এইটুকুই তো তফাত। বহিরাগত হলে তো বাংলায় আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল না! বহিরাগত কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে কখনও?’’

Advertisement

এই পোস্টারই দেখা গিয়েছে নন্দীগ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

জমি আন্দোলনের সময় একে অপরের সহযোদ্ধা থাকলেও, এই মুহূর্তে প্রতিপক্ষ শিবিরে মমতা ও শুভেন্দু। শুধু প্রতিপক্ষ শিবিরেই নয়, রাজনীতির ময়দানে একেবারে মুখোমুখি লড়াই তাঁদের, নীলবাড়ির লড়াইয়ে যা মুখ্য আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তা নিয়ে বিজেপি এবং শুভেন্দুর তরফে চাঁচাছোলা আক্রমণ এবং কটাক্ষ এলেও, শুভেন্দু বা অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে ততটা আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাননি মমতা।

তবে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর ডিসেম্বরের শেষে দাঁতনের সভা থেকে শুভেন্দু যে ভাবে গ্রাম বনাম শহরের লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন, ঠিক তার উল্টোপথে হেঁটে মঙ্গলবার গ্রাম বনাম শহর সমন্বয়ের সুর বাঁধতে দেখা গেল মমতাকে। শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘‘আমি নিজে গ্রামের মেয়ে। গ্রামের প্রতি আমার বিশেষ ভালবাসা রয়েছে। শহরে বড় হয়েছি। শহর সব দিয়েছে। শহরকে ভালবাসি। কিন্তু গ্রামে কেন যাই জানেন? কারণ, হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলাটা গ্রামই ফিরিয়ে দিয়েছে আমাকে। ছোটবেলায় পরীক্ষার পর প্রতি বার গ্রামে যেতাম। জমির আল ধরে হেঁটে ঘুরে বেড়াতাম। ধানের চারা পুঁততাম। ধান কাটতাম। কখনও শস্য ক্ষেতে যেতাম। কখনও আখের ক্ষেতে যেতাম। গ্রামের প্রতি বরাবরই টান আমার।’’

রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিজেপি বাংলায় ভাগাভাগি করছে, হিন্দু-মুসলমান করছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। কিন্তু তাঁর সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলে লাভ নেই বলে হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা হিন্দু-মুসলমান করছেন, তাঁদের পরিষ্কার বলছি, আমিও হিন্দু ঘরের মেয়ে। আমার সঙ্গে হিন্দু কার্ড খেলতে যাবেন না। হিন্দু ধর্ম মানুষকে ভালবাসতে শেখায়। আমরা বিবেকানন্দের কাছ থেকে হিন্দু ধর্ম শিখেছি। চণ্ডীপাঠ করে বাড়ি থেকে বেরোই আমি। আমাকে হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছেন? মুখস্ত করা বুলি আওড়ে ধর্ম নিয়ে খেলবেন আমার সঙ্গে?’’ মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানান, নন্দীগ্রামই তাঁকে সম্প্রীতি শিখিয়েছে। সেখানে মানুষে মানুষে ভাগাভাগি হয় না।

নির্বাচনী কর্মসূচির জন্য আগামী দিনে নন্দীগ্রামে একাধিক সভার পরিকল্পনা রয়েছে মমতার। আপাতত সেখানে একটি দু’কামরার বাড়ি নিয়েছেন তিনি। তৃমমূল নেত্রী জানিয়েছেন, আপাতত সাময়িক একটা ব্যবস্থা করেছেন। ঠিক করেছেন ৩ মাস অন্তর নন্দীগ্রাম থেকে ঘুরে যাবেন। পরবর্তী কালে নিজের জন্য সেখানে একটি ‘কুঁড়েঘর’ও বানিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement