পঞ্চায়েত মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হীরু লেট। ফাইল চিত্র।
আঘাত ভুলে ফের ময়দানে হীরুরা
জেলায় বিধানসভা ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব শুরু হয়েছে বুধবার। গত পঞ্চায়েত ভোটে এমন মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিরোধী দলের একাধিক কর্মী। তবে আক্রমণের আতঙ্ক কাটিয়ে ফের ভোট-ময়দানে তাঁরা। শাসক-শিবির অবশ্য বলছে, সংগঠন নেই বলেই বিরোধীরা মনগড়া অভিযোগ তুলছে।
মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বছর তিনেক আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দুষ্কৃতীদের আক্রান্ত হন হীরু লেট, অষ্টম মণ্ডল, অভয় রায়রা। এখনও মুখ নাড়াতে ব্যথা হয় নলহাটি থানার ভগবতীপুরের হীরু লেটের। এখনও মাথায় ব্যথা অনুভব করেন রামপুরহাট থানার কুশুম্বা গ্রামের মুকুল মুখোপাধ্যায়, ছোড়া গ্রামের অভয় রায়, ফরিদপুরের অষ্টম মণ্ডলরা। হীরুর কথায়, “এ বারেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে লড়াইয়ের ময়দানে আছি। কোনও মতেই একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে দেব না। তার জন্য করতে লড়াই করতে প্রস্তুত।”
২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে নলহাটি ১ ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রার্থীরা। তখনই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে সাদা কাপড়ে মুখ ঢাকা লাঠিধারী বাহিনীর হাতে জখম হন নলহাটি থানার ভগবতীপুর গ্রামের সিপিএম কর্মী হীরু লেট। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা করে সুস্থ হন তিনি। ৪০ বছরের সিপিএমের সক্রিয় কর্মী হীরু এ বারও দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে বেরোচ্ছেন।
হীরু বলেন, ‘‘আমি ব্লক অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু দূরে একটা জোর আওয়াজ করে বোমা ফাটল। চারিদিক ধোঁয়ায় ভরে গেল। বোমার টুকরো এসে গায়ে লাগল। আচমকা দেখি মুখে সাদা কাপড় বাঁধা তিনজন যুবক উইকেট হাতে আমাকে টানতে টানতে ব্লক অফিসের সামনে বটতলার দিকে নিয়ে যেতে চাইল। একজন আমার মাথায় আঘাত করতেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জানতে পেরেছিলাম ওরা আমার মুখে চোখে হাতে পায়ে উইকেট, পাথর দিয়ে আঘাত করেছিল। আমি মরে গেছি ভেবে ওরা আমাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল।” ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আক্রান্ত হয়েছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমও। তিনি বলেন, ‘‘আগেকার পরিস্থিতির থেকে মানুষ আরো বেশি সঙ্ঘবদ্ধ। তাই গণতন্ত্র হত্যাকারীদের মানুষ আর মেনে নেবে না।’’
একই রকম ভাবে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে এসে রামপুরহাট ১ ব্লক অফিসের সামনে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়ে জখম হয়েছিলেন বিজেপি নেতা অভয় রায়, অষ্টম মণ্ডল, মুকুল মুখোপাধ্যায়রা। বিজেপির জেলা বর্তমান জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহাও পঞ্চায়েত নির্বাচনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের মানুষ আসল পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত। তাই তৃণমূলের মুখে কাপড় বেঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা উন্নয়নবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ।’’
তবে শাসক দল তৃণমূলের নেতারা এই আক্রমণের অভিযোগ মানেননি। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘রাজ্যে বিরোধীদের প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, নিজেদের মধ্যে মারধর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। বিরোধীরা তাদের পায়ের তলার মাটি হারিয়ে এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনছে।’’