বেদখল: ঘোষপাড়ায় পথের দু’পাশে এ ভাবেই দখল হয়ে গিয়েছে ফুটপাত। নিজস্ব চিত্র।
গতিহীন এক রাস্তা। যেখানে গাড়ির গতি কখনও বাড়তে পারে না। তার একটা কারণ, রাস্তা অপ্রশস্ত। দ্বিতীয় এবং অন্যতম প্রধান কারণ, ফুটপাত থেকেও নেই! তা দখল হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ জায়গাতেই। তাই পথচারীদেরও হাঁটতে হয় রাস্তা দিয়েই। এমনই অবস্থা ব্যারাকপুর থেকে কাঁচরাপাড়াগামী ঘোষপাড়া রোডের।
আগামী ২২ এপ্রিল ভোট ব্যারাকপুর, নোয়াপাড়া, জগদ্দল, ভাটপাড়া-সহ একাধিক কেন্দ্রে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ফুটপাত দখল হয়ে রয়েছে বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু নজর নেই কারও। অভিযোগ, ভোট কমার আশঙ্কায় ফুটপাত দখলমুক্ত করা নিয়ে মাথা ঘামায় না রাজনৈতিক দলগুলিও।
ব্যারাকপুর থেকে কাঁচরাপাড়ার মধ্যে যাতায়াতের জন্য ঘোষপাড়া রোডই প্রধান রাস্তা। শহরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হলে ওই একটি রাস্তাই সম্বল। ঘোষপাড়া রোড ধরে চলতে চলতে পলতা পার করার পরেই দেখা যায়, কী ভাবে ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে।
ইছাপুরের দিক থেকে নৈহাটির দিকে এগোতে থাকলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ভাবে ফুটপাত দখলের ছবি। কোথাও ফুটপাত লাগোয়া দোকান রয়েছে। কিন্তু দোকান-মালিক ফুটপাতের উপরে বেঞ্চ পেতে রেখেছেন। সেখানে এসেই বসছেন ক্রেতা। কোথাও আবার ফুটপাতের উপরে তৈরি হয়ে গিয়েছে দোকান। কাঁকিনাড়া থেকে ভাটপাড়ার মধ্যে আবার দেখা গেল, ফুটপাতে ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে। লোকজন সেখানে পুরোদস্তুর বসবাস করছেন। কোথাও আবার গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ও। শ্যামনগর স্টেশনের ২৪ নম্বর রেলগেটের ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে ফল ও আনাজের বাজারে!
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শ্যামনগরে একটি পুরনো বাজার রয়েছে। সেটি ভিতরের দিকে। কিন্তু কল্যাণী, শিমুরালি-সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আনাজ নিয়ে এসে ঘোষপাড়া রোডের ফুটপাতের উপরেই বিক্রি করতে বসে পড়েন। দাম কম হওয়ায় বেশির ভাগ ক্রেতা পুরনো বাজারে না ঢুকে রাস্তায় সাইকেল-বাইক দাঁড় করিয়ে কেনাকাটা সারেন। ফলে তৈরি হয় যানজট।
এ সবের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে টোটোর স্ট্যান্ড। শ্যামনগর
এলাকায় টোটোস্ট্যান্ডও ঘোষপাড়া রোডের যানজটের একটি কারণ বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। তাঁরা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশেরই সক্রিয় হওয়া উচিত। তাঁরা জানান, ফুটপাত দখল হয়ে থাকায় গাড়ি বা
অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলে সমস্যা হয়। কোনও কোনও জায়গা এমন রয়েছে, যেখানে দু’দিক থেকে বড় গাড়ি চলে এলে তৈরি হয় যানজট। ফুটপাত দখল হওয়ার কারণে যানজটের সমস্যা রয়েছে নৈহাটি স্টেশনের কাছেও।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষাল জানান, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বছর চারেক আগে ভাটপাড়া পুরসভায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘তার পরে কিছু দিনের জন্য পরিস্থিতি একটু বদলেছিল। তার পরে আবার যে-কে-সেই।’’
ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ার সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ভাটপাড়া পুরসভার প্রশাসক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও চাই, ফুটপাত দখলমুক্ত হোক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। শ্যামনগর স্টেশনের রেলগেটের কাছে আনাজ বিক্রি করে বহু গরিব মানুষ রোজগার করেন। ওঁদের রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছি।’’
একই যুক্তি দেখিয়েছে নৈহাটি পুরসভাও। পুর প্রশাসক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্যা রয়েছে জানি। কিন্তু লকডাউনে আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হওয়ার পরে গরিব মানুষজন আবার একটু একটু করে রোজগার করতে শুরু করেছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে ওঁদের উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়।’’