অসচেতন: করোনার কোনও বিধিই মানলেন না নেতারা। দোলে এ ভাবেই রং নিলেন তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র। নিজস্ব চিত্র
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। তবে রঙের উৎসবে তা মালুমই হল না। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ভোটের প্রচারকে সামনে রেখে রাজনৈতিক নেতারা যে ভাবে মেতে উঠলেন, তাতে নতুন করে আরও বড়সড় বিপদের আশঙ্কায় চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা। কেন না নেতাদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। দূরত্ব বিধির বালাই নেই।
রবিবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বা দাগাপুরে একটি সংস্থার আয়োজনে দোলের অনুষ্ঠানে বিদায়ী পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, বিজেপি প্রার্থী আনন্দ বর্মণকে মাস্ক ছাড়াই দেখা গিয়েছে। নেতা-প্রার্থীদের রং খেলায় এমনই ছবি ধরা পড়েছে শিলিগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, মাটিগাড়া, ফাঁসিদেওয়ার মতো বিভিন্ন এলাকায়। শিলিগুড়ি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র বা সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যদের মুখে অনেক সময়েই মাস্ক যেমন দেখা যায়নি, দূরত্ব বিধির ক্ষেত্রেও তাঁদের অসচেতনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই পরিস্থিতি দেখে হতাশ বিশেষজ্ঞেরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। কোথায় কার মধ্যে জীবাণু লুকিয়ে রয়েছে আর ছড়াচ্ছে কেউ জানেন না। তাই এই পরিস্থিতিতে যতই রং খেলুন, সবারই করোনা বিধি মেনে চলা উচিত। অথচ মাস্ক থাকছে না। রং খেলতে গিয়ে দূরত্ব বিধি তো মানাই হয়নি।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ রাজ্যেও দ্বিতীয় ঢেউ সক্রিয়। জনজমাবেশ বা রং খেলার মতো মেলামেশা থেকে দ্রুত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। ভোট প্রচারকে সামনে রেখে এ ভাবে রাজনৈতিক নেতাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার কড়া সমালোচনা করছেন অনেকেই।
উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে বাঁচাতে ঝাঁপিযে পড়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে নেতাদের লাগাম ছাড়া মনোভাব ফের যদি সেই পরিস্থিতি তৈরি করে, তা হলে তাঁরা কতটা উৎসাহ পাবেন? তাঁদেরও পরিবার রয়েছে।’’ রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের উদাসীনতার কড়া সমালোচনা করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভাইরোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অরুণাভ সরকারও। তাঁর কথায়, নেতারা অনেকেই বুঝতে পারছেন না, কত বড় বিপদের মধ্যে সকলে পড়তে পারেন।
মাস্ক না পরার জবাব হিসেবে যুক্তি দিতে গিয়ে নেতারা বিব্রত। ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘এ ভাবে চলাটা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। কোনও ভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’ বিজেপি প্রার্থী আনন্দ বর্মণের কথা, ‘‘এটা করা ঠিক হয়নি। প্রচারে সব সময় মাস্ক রাখার দিকে নজর দেব।’’ গৌতম আগেও বলেছেন, মাস্ক থাকলে অনেক সময় ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীর পরিচিত হতে সমস্যা হচ্ছে। কথা বলার সময় মাস্ক খুলতে হচ্ছে। তবে চেষ্টা করছেন মাস্ক পরে থাকার। রবিবার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোরার সময় অশোক ভট্টাচার্যের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। তিনিও গৌতমের মতো যুক্তি দিয়েছেন। সোমবার নিজের পাড়ার প্রবীণ তৃণমূল নেতা প্রতুল চক্রবর্তীর বাড়িতে রং খেলায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান শঙ্কর ঘোষ, দলের নেত্রী সবিতা আগরওয়াল। তাঁদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। শঙ্করের কথায়, ‘‘দু’এক সময় মাস্ক পরা হচ্ছে না। তবে চেষ্টা করছি মাস্ক ব্যবহার করতে।’’