গ্রাফিক। নিরুপম পাল।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের ঘটনার রিপোর্ট তলব করল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের তরফে বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে কোচবিহারের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রের খবর। বিজেপি-র তরফেও এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে অভিযোগ জানানো হয়। অবশ্য তার আগেই কমিশনের তরফে এ বিষয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়।
বুধবার দুপুরে কোচবিহারের জনসভায় মমতা বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী তথা সিআরপিএফ এমনকি, রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটের সময় রাজ্যে কিছু ‘বিজেপি-সিআরপিএফ’ এসেছে। তারাই ভোটারদের হেনস্থা করছে। পরের দফার ভোটপর্বগুলিতে সিআরপিএফ যাতে কোনও গন্ডগোল করতে না পারে, মানুষকে হেনস্থা না করতে পারে, তা দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাবেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশেই সিআরপিএফের একাংশ বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সঙ্গে ভোটদাতা এবং তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশে মমতার পরামর্শ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘গন্ডগোল’ করার চেষ্টা করলে মহিলারা যেন তাদের ঘেরাও করেন। তাঁর বক্তব্য, “এক দল ঘেরাও করে রাখবেন। এক দল ভোট দিতে যাবেন। ভোট নষ্ট করবেন না। আপনি যদি শুধু ঘেরাও করে রাখেন, তা হলে ভাববে ভালই তো ভোটটা পড়ল না। এটাই বিজেপি-র চাল।”
নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়ে বিজেপি প্রতিনিধিদলের সদস্য শিশির বাজোরিয়া বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বললাম, আপনারা যদি ওঁকে (মমতা) ‘সেন্সর’ না করেন, এই জিনিসটা আরও বাড়বে।’’ তাঁর অভিযোগ পরের দফার নির্বাচনগুলিতে মমতা নিজের হার নিশ্চিত বলে বুঝতে পারবেন এবং যে কোনও ভাবে ‘বড় অঘটন’ ঘটাবেন।
শিশিরের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ‘স্টেপ বাই স্টেপ’ (ধাপে ধাপে) কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আটকানোর কথা বলেছেন। স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, একটা দল ঘেরাও করবে। একটা দল ভোট করে আবার আসবে। আবার একটা দল ঘেরাও করবে। এই ভাবে তিন ভাগে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আটকাতে হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে মমতাকে ‘সাইলেন্স’ করা প্রয়োজন বলেও জানান শিশির। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের তরফে বিষয়টি দিল্লিকে জানানোর আশ্বাস মিলেছে বলেও জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনকে বিজেপি-র তরফে জানানো হয়েছে, তিন দফায় ভোট মোটামুটি ভাবে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
বস্তুত, মমতার সভার পরেই বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্র এবং সংবিধান বিরোধী কাজ করেছেন।’’ যে দলের প্রধান এমন মন্তব্য করেন সেটি রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য কি না, সে প্রশ্নও তোলেন জয়প্রকাশ।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পুলিশমন্ত্রী মমতা বুধবার রাজ্য পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধেও বিজেপি-র হয়ে কাজ করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “আমি অনেক জায়গায় দেখেছি, ভোটের সময় পুলিশ বিজেপি হয়ে যায়! তবে ছোট পুলিশদের কোনও দোষ নেই। পুলিশের নেতারা সব আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে বসে আছে।” এই প্রসঙ্গে জয়প্রকাশের মন্তব্য, ‘‘উনি (মমতা) এখনও রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। কী ভাবে বলতে পারেন, কোন থানা বিজেপি, কোন থানা তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে!’’