অমিত শাহ এবং সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পর ১০ বছরে সেখানে কোনও উন্নয়ন করেননি বলে অভিযোগ করলেন অমিত শাহ। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে টাটাদের ন্যানো গাড়ির কারখানা গুজরাতের সানন্দ থেকে সিঙ্গুরে ফিরবে কি না জানতে চাওয়া হলে অমিতের জবাব, ‘‘এটা কিছুটা সঙ্কীর্ণ ভাবনা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক কিছুই আসবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর ‘আক্ষেপ’, ‘‘এখানে শুধু ন্যানোরই প্রচার হয়।’’
সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে মমতার ‘সেনাপতি’ তথা বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এ বার সেখানে দল বদলে বিজেপি-র প্রার্থী। তাঁর হয়ে ‘রোড শো’ করতে এসে অমিত জানান, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন এবং বেকারদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে বিজেপি-র সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনী ইস্তাহারে পশ্চিমবঙ্গের ভারী, মাঝারি, ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরির কথা জানিয়েছি। তারই ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হবে।’’
সিঙ্গুর-সহ গোটা রাজ্যে শিল্পায়ন না হওয়া নিয়ে অমিতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারী শিল্প গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের প্রয়োজন। শিল্পায়নের জন্য কেন্দ্রের তরফে পশ্চিমবঙ্গ কোনও সাহায্য পায়নি।’’
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ার জন্য সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মমতার আন্দোলনের জেরে ২০০৮-এর অক্টোবরে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো প্রকল্প সরিয়ে নিয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। আমদাবাদ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে সানন্দে তৈরি হয় ন্যানো গাড়ির কারখানা। বস্তুত, গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সে রাজ্যে গিয়েছিল ন্যানো।
২০১১-য় ক্ষমতায় আসার পরে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরাতে বিধানসভায় আইন পাশ করান মমতা। কিন্তু জমি দখল ঘিরে টাটাদের সঙ্গে আইনি লড়াই শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৬-য় সুপ্রিম কোর্ট বুদ্ধদের সরকারের জমি অধিগ্রহণ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে কৃষকদের জমি ফেরানোর নির্দেশ দেয়।
বুধবার হুগলির জমি আন্দোলনের কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রচারে এসে অমিত বলেন, ‘‘পৃথিবী থেমে থাকে না।’’ তাঁর দাবি, জঙ্গল মহল থেকে সুন্দরবন, উত্তরবঙ্গ থেকে সিঙ্গুর সর্বত্রই এখন পরিবর্তনের হাওয়া। সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন নিয়ে বিজেপি-র ভাবনা শুধুমাত্র ন্যানো-কেন্দ্রীক নয়, বৃহত্তর।
তৃণমূল নেত্রী ভোটপ্রচারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন। নির্বাচন কমিশন নয়, অমিতই পশ্চিমবঙ্গে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিচালনা করছেন। এ প্রসঙ্গে অমিতের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এতেই বোঝা যাচ্ছে, উনি হারছেন।’’