টালিগঞ্জে দলীয় সমর্থকদের খাবার পরিবেশন করছেন বাবুল সুপ্রিয়
দোল মানেই রঙের বাহার। ভোটের মরসুমে সবুজ-লাল-গেরুয়া সব আবিরই মিশে গেল রাজনীতির রঙে।
কেউ পরিবারের সঙ্গে দোল খেলে সকাল কাটালেন। কেউ শামিল বসন্ত উৎসবে, কাউকে দেখা গেল ছোটদের সঙ্গে রং খেলার আসরে। প্রভাত ফেরিতে কেউ খোল বাজিয়ে নজর টানার চেষ্টা করলেন, আবার কেউ পা মেলালেন নৃত্য উৎসবে। প্রচারের ফাঁকে রং বিনিময় তো অবশ্যই। ভোটের প্রার্থীদের সকলের রুটিনেই এই রবিবার বড় জায়গা নিয়ে থাকল দোল। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস— কোনও প্রভেদ সেখানে নেই। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করলেন অনেকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার নন্দীগ্রামে তৃণমূল প্রার্থী। চণ্ডীপুরে সভা সেরে এ দিন সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে কীর্তন শিল্পী এবং তৃণূমূলেরই আর এক প্রার্থী অদিতি মুন্সি। মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী প্রচারে ছিলেন সাগর ও পাথরপ্রতিমায়। সেখানেও দোলের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনি। বাঁকুড়ায় তৃণমূলের প্রার্থী সায়ন্তিকা প্রচারে আবির বিনিনয় করে দাবি করেছেন, ২ মে-র (ভোটের ফলপ্রকাশের দিন) পরে আবার আবির খেলা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বিজেপির তারকা প্রচারক মিঠুন চক্রবর্তীকে ঘিরে জনতার উন্মাদনায় দেখা মিলেছে আবিরেরও।
বালিতে সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর
কলকাতায় রাজ্যের মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যোগ দিয়েছেন দোলের উৎসবে। অসুস্থতা কাটিয়ে ফিরে এসেই জনতার মাঝে রং হাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শোভনদেবের কথায়, ‘‘প্রতি বারই এলাকার মানুষের সঙ্গে দোলে থাকি। এ বারও দলের ছেলেরা বলেছিল, মানুষ চাইছেন ছোট করে হলেও উৎসব হোক। সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি।’’ আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে মহিলা সহকর্মীদের সঙ্গে নাচতে দেখা গিয়েছে প্রভাত ফেরিতে। ব্যারাকপুরে জোড়া ফুলের প্রার্থী, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এলাকায় প্রভাত ফেরিতে বেরিয়েছিলেন খোল হাতে।
বিধাননগরের প্রার্থী ও মন্ত্রী সুজিত বসু ‘শ্রীভূমি’তে সপরিবার শামিল হয়েছিলেন দোলের আসরে। আবার বিধাননগরেই একটি ব্যাঙ্কোয়েটে বিজেপির বসন্ত উৎসবে রীতিমতো গায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। ছিলেন সব্যসাচী দত্তও। ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষ দোল কাটিয়েছেন ছোটদের সঙ্গে।
সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী প্রতি বারই পরিবার ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে দোলের সকালে রং মেলানোয় থাকেন। এ বার ভোটের বসন্তে তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। কসবায় শতরুপ ঘোষের সঙ্গে বসন্ত উৎসবে ছিলেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ পালোধিরা। শতরুপ বলেন, ‘‘দোলে যেমন সব রং আছে, ভোটের পরেও যেন সকলে এ ভাবেই মিলে-মিশে থাকতে পারি।’’ ঐশী ঘোষ, দীপ্সিতা ধরের মতো সিপিএমের তরুণ প্রার্থীদের প্রচারেও ছিল রঙের ছোঁয়া। কামারহাটির সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র বসন্ত উৎসবে অংশীদার হয়েছিলেন দেশপ্রিয় নগরে।
কসবায় সিপিএম প্রার্থী শতরূপ ঘোষকে আবিরে রাঙাচ্ছেন এক সমর্থক
তবে দোলে এই ‘মিলনের উৎসব’ই সব চেয়ে নজর কেড়েছে তৃণমূলের মদন মিত্র ও বিজেপির তারকা প্রার্থী শ্রাবন্তী, তনুশ্রী, পায়েলদের ক্ষেত্রে। গঙ্গাবঙ্গে এবং গঙ্গার তীরে নানা জায়গায় বসন্ত উৎসবে একসঙ্গে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা, আয়োজনে কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ ছিল না। সকলেরই বক্তব্য, রাজনীতির রং বিচার না করে তাঁরা সামাজিক উৎসবে মিলিত হয়েছিলেন।
কিন্তু ভোটের সময়ে রাজনীতির রং কি অত সহজে ফিকে হয়? তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে শ্রাবন্তী, পায়লদের দোল উৎসবের দিকে ইঙ্গিত করেই বিজেপির যুব মোর্চার সহ-সভাপতি তরুণজ্যোতি তিওয়ারি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, ‘১৪৪ জনের (তৃণমূলের হাতে যে কর্মী-সমর্থকেরা নিহত বলে বিজেপির দাবি) প্রাণের দাম ওঁদের কাছে আছে?’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘দোলযাত্রা পরিবারের লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে উপভোগ করা যায়। যারা যাদের পরিবার মনে করে, তাদের সঙ্গে রং খেলেছে। এর মধ্যে আপত্তির কিছু নেই’। দুই ফুলকে মিলিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি সিপিএমও। তাদের মন্তব্য, দুই রং কখন কোথায় মিলে যায়, মানুষ ধরতে পারছেন কি?