প্রচারে অসিতবাবু। ছবি: সুব্রত জানা।
ব্যতিক্রম শুধু কোলাপুরি চটিজোড়া।
এ ছাড়া, কোনও কিছুতে আজ পর্যন্ত আমতার বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা এ বারের প্রার্থী অসিত মিত্রের বাহুল্য বা বিলাসিতার কথা মনে করতে পারছেন না কেউ।
অসিতবাবু চার বারের (১৯৯৬, ২০০১, ২০১১ এবং ২০১৬) বিধায়ক। এখনও তাঁর অফিস দেউলগ্রামে বাড়ি লাগোয়া খড়ে ছাওয়া একচিলতে কুঁড়েঘর। গাড়ি তো দূরের কথা, একটি মোটরবাইকও নেই তাঁর। মাঠঘাটে ঘুরতে গেলে দলীয় কর্মীর বাইকে সওয়ার হন। না হলে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি আর কোলাপুরি চটি— এই বেশেই এই কংগ্রেস নেতাকে পথেপ্রান্তরে দীর্ঘদিন দেখছেন এলাকার মানুষ।
বাহুল্য নেই খাওয়া-দাওয়াতেও। নির্বাচনী প্রচারে বেরনোর আগে বেশিরভাগ দিন তাঁর খাওয়া বলতে একটি সিদ্ধ ডিম, কয়েক টুকরো সিদ্ধ গাজর ও ঢেঁড়শ। রাস্তায় মাঝেমধ্যে লাল চা। কখনও-সখনও মুড়ি আর কড়াইশুঁটিসিদ্ধ। কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা সুবীর মণ্ডলের কথায়, ‘‘চাঁদা তুলে প্রাতরাশের আয়োজন করছি। আমাদের প্রার্থী গরিব। খাবারের টাকা দেবেন কী ভাবে?’’
এই অনাড়ম্বর জীবনযাপনই কি তাঁকে গ্রামবাসীদের ‘কাছের মানুষ’ করে তুলেছে?
সত্তরোর্ধ্ব অকৃতদার অসিতবাবুর কথায়, ‘‘আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নেই। ফ্ল্যাট নেই। গাড়ি নেই। ভোটে লড়ার পর্যাপ্ত টাকাও নেই। ঠিক ভাবে দেওয়াল লিখন করতে পারছি না। কিন্তু মানুষ আছেন আমার সঙ্গে। সেটাই আমার তৃপ্তি, বড় ভরসা।’’
এই তো সে দিন জয়পুরের জয়চণ্ডীতলায় প্রচারে বেরিয়েছিলেন অসিতবাবু। পথচারী থেকে শুরু করে দোকানি, ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে যাওয়া দিনমজুর, রাস্তার ধারে বসে আড্ডা মারতে থাকা লোকজন— সবাই তাঁকে দেখে হাত নাড়ছিলেন। প্রচারের মাইক বলছিল, ‘কাজের মানুষ, কাছের মানুষ অসিত মিত্র’।
বরাবর তিনি বিরোধী বিধায়ক। ২০১১-তে তৃণমূলের জোটপ্রার্থী হয়ে জিতলেও সরকার গঠনের কিছুদিনের মধ্যে জোট ভেঙে যায়। এই বিধানসভা কেন্দ্রের সব পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতে। দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিতেও (আমতা-২ ও বাগনান-১) ক্ষমতায় তৃণমূল। ‘হংস মধ্যে বক যথা’ অবস্থাতেও অবশ্য কাজ থেকে পিছিয়ে যান না এই কংগ্রেস নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার এলাকার সমস্যা সমাধানে আমি মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন মহলে বারবার দরবার করেছি। বিধানসভায় সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। বন্যা হলেই বন্যার্তদের কাছে ছুটে গিয়েছি। বিধায়ক হিসাবে এইসব কাজ করেছি আন্তরিক ভাবে। হয়তো সেগুলি মানুষ মনে রেখেছেন।’’
২০০৭ সালে বাকসিতে গাইঘাটা খালে ভাঙন দেখা দেয়। বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন অসিতবাবু বিধায়ক নন। তবুও তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে সারারাত বাঁধ মেরামতি করে এলাকাকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। সেইসময়ে বিধায়ক ছিলেন সিপিএমের রবীন্দ্রনাথ মিত্র। এ বারে তিনিই অসিতবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট। তাঁর কথায়, ‘‘অসিতের গায়ে এই এলাকার নদী-নালা-মাটির গন্ধ লেগে আছে।’’
আমতা জুড়ে ভোটের ব্যানার-পোস্টারে ছয়লাপ করে দিয়েছে তৃণমূল-বিজেপি। অসিতবাবুর সম্বল গুটিকয়েক দেওয়াল-লিখন। তিনি বলেন, ‘‘কী করব! কর্মীদের পয়সা দিতে পারিনি। তাঁরা দেওয়াল-লিখন করবেন কী ভাবে?’’ সিপিএম নেতারা জানিয়েছেন, দলের তরফে কুপন পাঠানো হয়েছে। তা দিয়ে চাঁদা তুলে নির্বাচনের খরচ তোলা হবে।
অর্থাভাব রয়েছে। গুরুত্ব দিচ্ছেন না অসিতবাবু। মানুষের ভিড় এখনও তাঁকে ঘিরে রয়েছে যে।