দলীয় দফতরে বিমল গুরুংপন্থী মোর্চার কালিম্পঙের প্রার্থী রামবাহাদুর ভুজেল। নিজস্ব চিত্র।
বুধবার দুপুরে কালিম্পং শহর ও লাগোয়া গ্রাহামস হোমে প্রচারে বার হয়ে পানীয় জলের সমস্যার কথা বলছিলেন রাম বাহাদুর ভুজেল। পাহাড়ের বিজনবাড়ি কলেজের প্রিন্সিপাল ভুজেল এবারে বিমল গুরুংপন্থীদের কালিম্পং আসনে বিধানসভার প্রার্থী। শিক্ষিত, আপাদমস্তক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বলে মোর্চায় পরিচিত ভুজেল ক’বছর আগে জিটিএ সভাসদ ছিলেন। ৬২ বছর বয়সে ভোটের লড়াইয়ে নেমে নানা সমস্যার মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনছেন জলের কথা। বলছেন, ‘‘গ্রামে বড় হয়েছি। আমার বাড়িতে ট্যাঙ্কের জল কিনে চালাতে হয়। পাহাড়ের জলের সমস্যা জানি। জিতলে একটা কিছু করব।’’
আলাদা রাজ্য, ১১ জনজাতির তফসিলি স্বীকৃতি, জমির অধিকার ও পাট্টা, পার্কিং, পাহাড়ের রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে কালিম্পঙে জায়গা করে নিয়েছে পানীয় জল। বিনয় তামাংপন্থী প্রার্থী রুদেন লেপচা থেকে বিজেপির শুভ প্রধান, কেউ ভোট প্রচারে বাদ রাখছেন না জল প্রসঙ্গ। সবার মুখে এক কথা— দার্জিলিঙে জলের সমস্যা নিয়ে তাও লোকজন বলে। কিন্তু কালিম্পঙেও এক সমস্যা৷ এটা এবারে মেটাতে হবে৷ নইলে যে ভাবে কালিম্পঙের জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে লোকজনকে আগামীতে সমতলে গিয়ে থাকতে হবে।
তিন বছর আগে ২০১৮-এ কালিম্পঙে প্রশাসনিক সভা করতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিম্পং-সহ পাহাড়ের পানীয় জল ও রাস্তা নিয়ে সরব হন। পূর্ত দফতর ও জিটিএ-র সৌজন্যে রাস্তার হাল অনেকটা ফিরলেও জল সমস্যা বদলায়নি। যা এবার কালিম্পঙের ভোটের ইস্তাহারগুলিরও অংশ। কবে বা আদৌ কী ভাবে তা মিটবে, সেটা স্পষ্ট নয়।
কালিম্পং শহরে নেওড়া খোলা, রেলি এবং থুকচুপের মতো তিনটি জায়গা থেকে জল ডেলো রিজার্ভারে আসে। প্রায় ১০ গ্যালন পানীয় জল কালিম্পঙে রোজ লাগে। কয়েক বছর আগে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি জল পেতেন না বাসিন্দারা। তা এখনও বদলায়নি। এখনও সুতোর মতো জল পড়ে, জানাচ্ছেন ১০ মাইলের বাসিন্দা সোয়াং ভুটিয়া, নরবু রাই বা সোনাম লেপচারা। বলছেন, ‘‘কয়েক বছর আগে ২০০ টাকায় হাজার লিটার জল কিনতে হত। বছর বছর দাম বেড়েই চলেছে। ভোট এলে সবার আলাদা রাজ্যের মতো জলের কথাও মনে পড়ে। ভোট গেলেই জল আবার বিশ বাঁও জলে।’’
জিটিএ সূত্রের খবর, দার্জিলিঙের পানীয় জলের জন্য বালাসন জল প্রকল্প বাম আমলে শুরু হয়েছিল। এখনও তা চলছে। তেমনি ভাবে কালিম্পঙের জন্য নতুন ১০টি জলের উৎস খোঁজা হয়েছিল। কিন্তু তার বেশিরভাগের কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মেলে। পিছিয়ে আসে চিন্তাভাবনা। বর্তমান ঝোরাগুলো শীতে শুকিয়ে গেলেই শুরু হয় জলের সমস্যা।
মোর্চা সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিক থাকালে ২ এপ্রিল থেকে কালিম্পঙে ঘাঁটি গাড়ার কথা গুরুং-এর। গুরুংপন্থী প্রার্থী ভুজেল বলছেন, ‘‘বিমল গুরুং ও আমরা সবাই মিলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে জল সমস্যা মেটাবই।’’