বহিরাগত প্রার্থী করায় তৃণমূলের বিক্ষোভ উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রে। ছবি: সুব্রত জানা।
‘বহিরাগত’ নয়, ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থী চেয়েছিলেন উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ। কিন্তু তা হল না। বিদায়ী বিধায়ক ইদ্রিশ আলির জায়গায় এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করল প্রাক্তন ফুটবলার, কালনার বাসিন্দা বিদেশ বসুকে। ফলে, ভোটে তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, স্থানীয় নেতাকর্মীদেরই একটা বড় অংশ জয় সহজ হবে না বলে মনে করছেন। ‘বহিরাগত’ প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিবাদে এ দিন রাতে বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ হয়।
বস্তুত, হাওড়ার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে সব জায়গায় ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীর দাবি উঠেছিল, তার মধ্যে নজরকাড়া ছিল উলুবেড়িয়া পূর্ব। এখানে কার্যত গোটা দলই ওই দাবি তোলে। দাবিদারদের মধ্যে ছিলেন এই কেন্দ্রের দলীয় সভাপতি বেণুকুমার সেনও। যদিও প্রার্থী ঘোষণার পরে তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে আমরা কোনও ভূমিপুত্রকে চেয়েছিলাম। এখন নেত্রী যাঁকে প্রার্থী করেছেন, তাঁর জন্য আমরা ঝাঁপাব।’’ দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘উলুবেড়িয়া পূর্ব আমাদের ছিল, আমাদেরই থাকবে।’’
তবে, স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশের দাবি, বিষয়টি এত সহজ নয়। কারণ, ইদ্রিশকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের মধ্যে যেমন অসন্তোষ দেখা দেবে, অন্যদিকে যাঁরা ভূমিপুত্রের দাবি তুলেছিলেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে দেখা দেবে ক্ষোভ। সংযুক্ত মোর্চার তরফে এই আসনটি আইএসএফ-কে ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এখানে প্রচুর সংখ্যালঘু ভোটার আছেন। ফলে, লড়াই সহজ হবে না। এখানে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি।
প্রার্থী বদলের ঘটনা শুধু উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ নেই। হাওড়ার সদর ও গ্রামীণ মিলিয়ে ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতেই নতুন মুখ এসেছে। গ্রামীণ এলাকায় উলুবেড়িয়া পূর্ব ছাড়াও প্রার্থী বদল হয়েছে সাঁকরাইল এবং জগৎবল্লভপুরে। সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দারের বদলে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা পরিষদ সদস্য প্রিয়া পালকে। জগৎবল্লভপুরে বিধায়ক মহম্মদ আব্দুল গনির জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষকে। তবে ইদ্রিশ এবং গনিকে যথাক্রমে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা এবং মালদহের সুজাপুরে প্রার্থী করা হয়েছে। ইদ্রিশ এবং গনি কেন্দ্র বদল নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাঁকরাইল এবং জগৎবল্লভপুরে আবার প্রার্থী বদলের অভিঘাত তেমন পড়বে না বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। সাঁকরাইলে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া শীতল সর্দারের বিরুদ্ধে দলের একটা বড় অংশের তরফে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি তিনি জেলা সদর তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বেসুরো’ গেয়ে তাঁদের কোপেও পড়েন। শীতলবাবু এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অন্যদিকে দলের একটা বড় অংশের পক্ষ থেকেই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অভিযোগ উঠেছিল গনির বিরুদ্ধে।