প্রতীকী ছবি।
বক্তারনগর, ধান্ডাডিহি, মঙ্গলপুরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রাম। গ্রাম লাগোয়া এলাকায় রয়েছে স্পঞ্জ আয়রন, সিমেন্ট-সহ বেশ কয়েকটি কারখানা। অথচ, সে সব কারখানায় এই গ্রামগুলির খুব কম লোক কাজ পেয়েছেন, অভিযোগ গ্রামবাসীর একাংশের।
বক্তারনগরের বাসিন্দা লুইচাঁদ সূত্রধর, সুকুমার খাঁ’রা জানান, কারখানার ধোঁয়া তাঁদের গ্রামের আকাশেও ওড়ে। কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা নির্মাণ শিল্পের কাজে জেলা ও রাজ্যের নানা প্রান্তে ছোটেন। অনেকে ঠিকাকর্মীর কাজ করেন।’’ স্থানীয় সূত্রে এ-ও জানা যায়, পাণ্ডবেশ্বর ও রানিগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে বাসিন্দাদের অনেকেই ‘বেআইনি কয়লার কারবারে’র সঙ্গে যুক্ত। এই মুহূর্তে সেই কারবারে ‘টান’। ফলে, অনেকেই এখন বাড়িতে ‘কর্মহীন’ হয়ে বসে রয়েছেন বলে দাবি।
সামগ্রিক ভাবে স্থানীয়দের নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সরব বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রানিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী হেমন্ত প্রভাকর বলেন, ‘‘বাম জমানায় জেলায় প্রায় দশ হাজার অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প-কারখানা তৈরি হয়। কিন্তু গত দশ বছরে ৬১২টি কারখানা বন্ধ। রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুক ও লাগোয়া এলাকায় প্রায় একশোটি কারখানা থাকলেও সেখানে বহিরাগতেরা কাজ করছেন। এর প্রতিবাদে ডিওয়াইএফআই আন্দোলনও করছে।’’
কিন্তু স্থানীয়দের নিয়োগ কেন করা ‘হয় না’? সিপিএম-এর পাণ্ডবেশ্বরের প্রার্থী সুভাষ বাউড়ির দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে দু’টি কারণ: প্রথমত, বহিরাগত শ্রমিকদের কাজে নিলে বেতনবৃদ্ধি ও শ্রমিক আন্দোলন সে ভাবে দানা বাঁধে না। দ্বিতীয়ত, কোথাও কোনও সমস্যা বা দুর্ঘটনা হলে, বহিরাগত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কার্যত কেউ থাকেন না। মালিক-শ্রেণি এই কারণেই বহিরাগত শ্রমিকদের কাজে অগ্রাধিকার দেন বলে অভিযোগ।
সিপিএম নেতৃত্ব, পাণ্ডবেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিষয়টির জন্য ‘দায়ী’ করছেন তৃণমূল নেতৃত্বকেও। জিতেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, ‘‘পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভায় খনি ও প্রায় ৫০টি বেসরকারি কারখানা আছে। শোনপুর-বাজারি প্রকল্পে প্রায় হাজার চারেক বহিরাগতকে তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কাজে ঢুকিয়েছিলেন।’’ প্রচারে নেমে মোট নিয়োগের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিটি তুলছেন রানিগঞ্জের বিজেপি প্রার্থী বিজন মুখোপাধ্যায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাণ্ডবেশ্বর ও রানিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী যথাক্রমে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। কার্যত এক সুরে তাঁদের দাবি, ‘‘বামেদের হাত ধরেই এখানের কারখানাগুলিতে বহিরাগত শ্রমিকদের আনাগোনা বাড়ে। তৃণমূল আমলে প্রচুর স্থানীয় বেকার
চাকরি পেয়েছেন।’’
যদিও বিভিন্ন কারখানার মালিকদের দাবি, কারখানা চালাতে মূলত দরকার দক্ষ শ্রমিকের। সেই শ্রমিক বাইরে থেকে বা স্থানীয় এলাকা থেকে নিয়োগ করা হয়। যদিও সামাজিক উন্নয়ন তহবিলে এ পর্যন্ত এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রে দক্ষ শ্রমিক তৈরির লক্ষ্যে কোনও ওয়ার্কশপ বা প্রশিক্ষণ শিবির করতে দেখা যায়নি কারখানা কর্তৃপক্ষকে, অভিযোগ রানিগঞ্জের কুমারবাজারের অলক চট্টোপাধ্যায়, রানিসায়রের প্রকাশ মাহাতোদের।
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘সব সময় স্থানীয়দের নিয়োগের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’’