ভোটে লড়ার জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া নতুন দেখছেন না আরামবাগ শহরের বাসিন্দারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার মোট সাত প্রার্থীর (বিজেপির ৪ এবং তৃণমূলের ৩) মনোনয়নে শোভাযাত্রার জেরে যে ভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা (১১টা-২টো) শহর অচল হল, তা আগে কবে হয়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।
মন্দিরে পুজো দিয়ে, ‘শুভ যোগ’ দেখে তৃণমূলের যে তিন প্রার্থী এ দিন মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন, তাঁরা হলেন— পুরশুড়ার দিলীপ যাদব, গোঘাটের মানস মজুমদার এবং আরামবাগের সুজাতা মণ্ডল খাঁ। তিন প্রার্থীকে নিয়েই আলাদা আলাদা মিছিল হয়। দিলীপ এবং মানস একসঙ্গে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মহকুমাশাসকের দফতরে ঢুকে যান। সুজাতা আসেন বেলা ১টা নাগাদ। তাঁর শোভাযাত্রায় ছিলেন মহিলা-ঢাকিরা।
একই ভাবে ‘শুভ যোগ’ দেখে যে চার বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেন, তাঁরা হলেন— গোঘাটের বিশ্বনাথ কারক, আরামবাগের মধুসূদন বাগ, পুরশুড়ার বিমান ঘোষ এবং খানাকুলের সুশান্ত ঘোষ। দৌলতপুরের দলীয় কার্যালয় থেকে তাঁরা একসঙ্গে ট্যাবলো সহযোগে শোভাযাত্রা করে মহকুমাশাসকের দফতরে আসেন। ট্যাবলোয় ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শোভাযাত্রায় বিপুল ভইড় হয়।
দফায় দফায় এই শোভাযাত্রার জেরে শহরের বাসুদেবপুর মোড় থেকে পল্লিশ্রী পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। শহর নিশ্চল হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতারও অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা মনে করছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি— দু’পক্ষই পরাজয়ের আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লোকবল দেখিয়েছে। তারা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে কিনা, দেখার কেউ নেই— এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, শোভাযাত্রায় অনুমতি নেওয়ার সঙ্গে প্রকৃত জমায়েত বা গাড়ি ব্যবহারে অসামঞ্জস্য হয়ে থাকলে ভিডিয়ো ফুটেজ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সব খরচ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর খরচের সঙ্গে যোগ হবে।
তবে, বিজেপি এবং তৃণমূল— দু’পক্ষই দাবি করেছে, নির্বাচনী আচরণ বিধি কোথাও লঙ্ঘিত হয়নি। তৃণমূলের দিলীপ যাদব এবং বিজেপির বিমান ঘোষের দাবি কার্যত একই, ‘‘প্রার্থীকে নিয়ে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল। মানুষ নিজেরাই মোটরবাইকে বা হেঁটে মিছিলে যোগ দিয়েছেন।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু শোভাযাত্রা সেরেই ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শক্তিশালী জেলাগুলোর মধ্যে আরামবাগ অন্যতম। দু’বছর আগে এখানে মিছিল করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। এখন যুব কর্মকর্তারা ভাল করছেন। এখানে আমাদের চার প্রার্থীই জিতবেন।” প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভকে আমল দিতে চাননি দিলীপবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘এখন কোথাও অসন্তোষ নেই।’’
এ দিন সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে পুরশুড়ার কংগ্রেস প্রার্থী মণিকা মালিক ঘোষ মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছোট মিছিল হয়েছে শহরের সিপিএম এরিয়া কার্যালয় থেকে। খানাকুলের আইএসএফ প্রার্থী ফয়সল খান আজ, শুক্রবার মনোনয়ন পত্র দাখিল করবেন বলে জানা গিয়েছে।