মুখোমুখি: চণ্ডীতলার সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র
ধেয়ে এল প্রশ্ন— ‘‘কেন সাম্প্রদায়িক আইএসএফের সঙ্গে জোট বাঁধলেন?’’
তাঁর উত্তর, ‘‘আইএসএফ সাম্প্রদায়িক, এটা কে ঠিক করে দিল? আসলে যাঁরা ভেবেছিলেন, সংখ্যালঘু মুসলিম, দলিত, আদিবাসীদের ভোট বামফ্রন্ট পাবে না, তাঁরা এখন ভয় পেয়ে গিয়েছেন। যাঁরা ভেবেছিলেন বামপন্থীদের গোড়া কেটে দেওয়া গিয়েছে, নতুন চারা গজাতে দেখে তাঁরা ভয় পেয়ে গিয়েছেন। ভয়েই তাঁরা মিথ্যা প্রচার করছেন।’’
আবার প্রশ্ন, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা চলছে। গুন্ডারাজ চলছে। ছাত্র নির্বাচন হচ্ছে না। ভর্তি হতে টাকা দিতে হচ্ছে। যে পরিবেশে আমরা পড়াশোনা করেছি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই পরিবেশ ফিরে পাবে?’’
তাঁর উত্তর: ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মস্তানি, কাটমানি নিয়ে ভর্তি করা— ইচ্ছে করে হয়েছে। এটা তাদের (তৃণমূলের) রাজনৈতিক দর্শন। বামফ্রন্টের সরকারের সময় গ্রন্থাগার শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছিল। এখন তা হয় না। বামপন্থী বা বিরোধীরা ছাত্র সংগঠন করতে না পারলে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, এটাই ছিল পরিকল্পনা। শিক্ষাঙ্গনকে কলুষতামুক্ত করতে হবে, স্বচ্ছতা আনতে হবে, গণতন্ত্রকরণ করতে হবে। মুক্তচিন্তার আবহ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এলে এই ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।’’
প্রশ্নকর্তা— সাধারণ মানুষ। উত্তরদাতা— চণ্ডীতলার সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। রবিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রচারে এ ভাবেই সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হলেন তিনি। ডানকুনির মিলন সঙ্ঘের মাঠে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে কয়েকশো মানুষের জমায়েত ছিল। অধিকাংশই তরুণ প্রজন্মের। বেশির ভাগ প্রশ্নই উঠে এল শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের বিষয়ে। কেউ শুধোলেন সংযুক্ত মোর্চা রাজ্যের ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে কারখানা হবে কিনা। কেউ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, তিনি কেন চণ্ডীতলায় প্রার্থী হলেন। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সেলিম। প্রতি ক্ষেত্রেই তৃণমূল এবং বিজেপিকে কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন।
রাজ্যে শিল্পের বেহাল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরতে চেষ্টার কসুর করেননি সেলিম। সে কথা বার বার তুলেই তিনি নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মূল সুর যে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন বিলি করা— তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি, সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এলে তাঁরা সমস্ত প্রয়াস ঢেলে দেবেন ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের উপরে। এ ক্ষেত্রে গোটা দেশের মধ্যে বাংলা আবার এক নম্বর হবে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প বাদ দিয়ে বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান হবে না বলেই তাঁরা মনে করেন।