মনোনয়ন পেশ হুগলি জেলায় সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের। ছিলেন মহম্মদ সেলিম, আব্দুল মান্নান। শুক্রবার শ্রীরামপুরে। নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা শুরু হতেই ক্ষোভ-অভিযোগ উপচে পড়ছে গেরুয়া শিবিরে। বিধানসভা ভোটের মুখে এমন পরিস্থিতির ফায়দা নিতে তৎপর হচ্ছে জোট শিবির। বিপক্ষের ‘বিক্ষুব্ধ’দের কাছে টানতে প্রার্থীদের বাড়তি নজর দেওয়ার বার্তা দিয়েছে সিপিএম। কিন্তু জোট শিবিরের যাবতীয় তৎপরতার মধ্যেও বিড়ম্বনা হয়ে এখনও থেকে যাচ্ছে কংগ্রেস!
ভোটের প্রচারে সভা-মিছিলের পাশাপাশি সংযুক্ত মোর্চার তরফে জেলায় জেলায় কর্মিসভা করেও জোটের কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শাসক দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ অংশকেই কাছে পেতে চেষ্টা করছে বাম এবং জোট শিবির। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘বিজেপির তালিকায় তৃণমূলের প্রাক্তনদেরই ভিড়। ফুল বদলে লাভ কী, মুখগুলো তো একই— সেই কথাই আমরা ওই দু’দলের সমর্থকদের বলছি। আর বিশেষত বিজেপি যে কোনও ভাবেই কোনও বিকল্প নয়, এখন সেটা জলের মতো স্পষ্ট। বিজেপির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলকে সমর্থন বা উল্টোটা করে সমস্যার সমাধান হবে না, তাই সকলের কাছে আবেদন করছি সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে থাকার।’’ সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) নেতারা এই চেষ্টায় নেমে পড়লেও তাতে এখনও সে ভাবে দেখা মিলছে না কংগ্রেসের।
বামেদের তালিকা ঘোষণা হয়ে প্রার্থীরা ময়দানে নেমে গেলেও কংগ্রেস এখনও তাদের সব আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি। বিভিন্ন জেলা থেকে সিপিএমের কাছে খবর আসছে, কংগ্রেসের আসনে বাম নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিক কাজে নামছেন কিন্তু বামেদের আসনে কংগ্রেসের তরফে একই রকম সাড়া মিলছে না। বাম নেতাদের নির্বাচনী কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে জোটের কথা মাথায় রেখেই। যেমন, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু আগামী সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে গিয়ে জলপাইগুড়ির কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে কর্মিসভা ও রোড-শো করবেন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এখনও তেমন কোনও উদ্যোগ জোট শিবিরের চোখে পড়েনি। প্রথম দফার ভোটের এলাকায় কংগ্রেসের ‘তারকা’ প্রচারকদেরও দেখা যায়নি।
কিছু জেলায় কংগ্রেসের ‘জোটপন্থী’ বলে পরিচিত নেতারা অবশ্য বামেদের সঙ্গে নিয়েই চলছেন। হুগলি জেলায় যেমন শুক্রবারই যৌথ মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ও সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। জেলার অন্য সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীরাও ছিলেন একসঙ্গে। সিঙ্গুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য চন্দননগরে মনোনয়ন জমা দিতে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন টাটার বাতিল প্রকল্প এলাকার ‘ইচ্ছুক’ জমিদাতা রবিন সাহানাকে। তবে জোটের মধ্যে বিড়ম্বনা বুঝেই প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন আবেদন জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যে তৃতীয় শক্তির বিকল্প সরকার গঠনের লক্ষ্যে আমরা সংযুক্ত মোর্চা গড়ে লড়াই করছি। এখন অন্য কোনও হিসেব মেলানোর সময় নয়। যেখানে বামফ্রন্ট বা আইএসএফের প্রার্থীরা আছেন, সেখানেও আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের সর্বশক্তি দিয়ে ময়দানে থাকতে হবে।’’