একসঙ্গে: মিছিল করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পথে সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম এবং কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ও শাদাব খান। নিজস্ব চিত্র।
প্রথম তিন দফার ভোটের আগে কংগ্রেস প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রচারে গিয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, এমনকি, মানিক সরকারের মতো সিপিএম নেতারাও। কিন্তু সিপিএম যেখানে লড়ছে, সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি-সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রচারে দেখা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত সেই ‘দূরত্ব’ মুছে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে একসঙ্গে প্রচারে নামছেন কংগ্রেস নেতারা। শিলিগুড়িতে সোমবার সূর্যবাবুর সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার হয়ে আবেদন জানালেন অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা। এর পরে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে কাল, বুধবার বিমানবাবুর সঙ্গে পথে নামতে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। বাম ও কংগ্রেস জোট গড়ে ওঠার পরে কলকাতায় এই প্রথম পথে একসঙ্গে দেখা যাবে বিমানবাবু, অধীরবাবুদের।
সূত্রের খবর, সিপিএমের নেতা-কর্মীরা জোটের হয়ে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে গেলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কেন শুধু কংগ্রেস প্রার্থীদের কেন্দ্রে সভা করে যাচ্ছেন, তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল আলিমুদ্দিনে। রাজ্য সিপিএমের শীর্ষ নেতারা কয়েক দিন আগে সেই ক্ষোভের কথা জানিয়েও দেন কংগ্রেসকে। তাঁদের বক্তব্য, আব্দুল মান্নান, অমিতাভ চক্রবর্তী, শুভঙ্কর সরকার বা দেবপ্রসাদ রায়ের মতো কংগ্রেস নেতারা প্রার্থী হিসেবে যে যার নিজের কেন্দ্রে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকেই তো প্রচারে বাড়তি ভূমিকা নিতে হবে। সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ছাড়া যে উদ্যোগ আর কারও তরফে দেখা যাচ্ছে না। আলিমুদ্দিনের ওই মনোভাব জানার পরেই রবিবার সিঙ্গুরে সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে রোড-শো’য় বিমানবাবুর সঙ্গে ছিলেন প্রদীপবাবুও। বিধানসভার মধ্যে গত পাঁচ বছর জোট ধরে রাখায় সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর ভূমিকা মনে রেখে তাঁর উদ্যোগে কলকাতার মিছিলে শামিল হবেন অধীরবাবু-সহ কংগ্রেস নেতারা।
সংযুক্ত মোর্চার মিছিল কাল শুরু হওয়ার কথা ঢাকুরিয়া থেকে। শেষ হবে গড়িয়ায়। কসবা, টালিগঞ্জ, যাদবপুর, সোনারপুর-সহ সংলগ্ন এলাকার প্রার্থীদের সমর্থনে ওই কর্মসূচি হবে। এই এলাকায় বেশির ভাগ আসনে বাম প্রার্থীরাই রয়েছেন। তার আগে এ দিনই হাজরা মোড় থেকে একসঙ্গে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিম এবং রাসবিহারী ও ভবানীপুরের দুই কংগ্রেস প্রার্থী আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ও শাদাব খান।
সংযুক্ত মোর্চার সমাবেশে সূর্য্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরী, অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার, শঙ্কর মালাকার প্রমুখ। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে। নিজস্ব চিত্র।
বাম ও কংগ্রেসের এখন মূল বক্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তৃণমূল দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তারা বিজেপির মোকাবিলা করতে পারবে না। বিজেপির রুখতে পারবে সংযুক্ত মোর্চাই। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে অশোক ভট্টাচার্য, শঙ্কর মালাকারদের সমর্থনে এ দিন জোটের সমাবেশে সেই বার্তাই শোনা গিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু সেখানে বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, যারা তৃণমূলের প্রার্থী, তাদের মধ্যেও গদ্দার রয়েছে। তারা ভোটে জেতার পরেও বিজেপিতে চলে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তা হলে তো তারা বিজেপিকে সরকার গড়তে পরে সাহায্য করবে। এই তৃণমূলকে ভোট দিলে বিজেপির মোকাবিলা হবে না।’’ তাঁর আহ্বান, ‘‘মানুষের কাছে বিকল্প সংযুক্ত মোর্চা রয়েছে। মোর্চাকে ভোট দিন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুরও বক্তব্য, রাজ্যে বাম-কংগ্রেসকে ভেঙে তৃণমূল নেত্রী এখন বিজেপিকে নিয়ে আর্তনাদ করছেন। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করছে মোর্চাই। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি নিজেরাই বলছে, তাদের অনেক জায়গায় সংগঠন নেই। তা হলে কীসের ভিত্তিতে তারা ২০০ আসন পাওয়ার কথা বলছে? হতে পারে, টাকা ছড়ানো হচ্ছে। হাতে-নাতে ধরার চেষ্টা করুন।’’
কংগ্রেসের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ সরিয়ে দক্ষিণবঙ্গে তাদের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নেমেছেন আইএসএফের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আব্বাস সিদ্দিকিও। রবিবার হাওড়ার উলুবেড়িয়া ও আমতা এলাকার পরে এ দিন শ্রীরামপুরের গুমোডাঙায় গিয়েও মান্নান-সহ কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করার আবেদন জানিয়েছেন আব্বাস।