—ফাইল চিত্র।
রাঢ়বঙ্গের দু’টি কেন্দ্রের পরে এ বার বাম ও কংগ্রেসের জোটে জট তৈরি হল দক্ষিণবঙ্গের আরও দুই আসন ঘিরে। মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ আসনে বুধবার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল সিপিএম। সেই সঙ্গেই তারা জানিয়ে দিল, নদিয়া জেলার শান্তিপুর আসনেও বামেরা লড়তে চায়। জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগিতে শামসেরগঞ্জ প্রথমে সিপিএমকে ছাড়া হলেও পরে সেখানে লড়তে চেয়েছে কংগ্রেস। আবার গত বারের জেতা আসন শান্তিপুর প্রথমে লড়তে চেয়ে পরে ছেড়ে দিতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত আবার নিজেরাই লড়ার কথা বলেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ওই দুই আসন দাবি করে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়িয়ে রাখল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
পুরুলিয়া জেলার জয়পুর আসন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লককে ছেড়ে দেওয়ার পরেও সেখানে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। ফ ব-ও পাল্টা নেপাল মাহাতোর বাঘমুণ্ডি আসনে প্রার্থী দিয়ে রেখেছে। ওই কেন্দ্রে মনোনয়ন প্রত্যাহারের মেয়াদ চলে যাওয়ায় সেখানে জোটের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হচ্ছে। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে অবশ্য মনোনয়ন জমা ও প্রত্যাহার-পর্ব শুরু হয়নি। ফলে, সেখানে রফা-সূত্র বার করার জন্য কিছুটা সময় থাকছে। জোট শিবির সূত্রের খবর, কংগ্রেস যাতে অন্তত শামসেরগঞ্জ আসনের দাবি ছেড়ে দেয়, সেই লক্ষ্যেই রফা করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক বর্যীয়ান নেতার কথায়, ‘‘সিপিএম নেতৃত্বকে আমরা অনুরোধ করেছি, এখনই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন না। আলোচনায় জট কেটে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জেলা মুর্শিদাবাদে গোড়া থেকেই জোটে টানাপড়েন আছে। জেলার ২২টি আসনের মধ্যে গত বার কংগ্রেস ১৪, সিপিএম চার ও তৃণমূল চারটি আসন জিতেছিল। গত বার যে যার জেতা আসন এ বার লড়বে, এই শর্তে প্রথমেই কংগ্রেস ১৪ ও সিপিএম চারটি আসন লড়বে বলে ঠিক হয়েছিল। আর তৃণমূলের হাতে থাকা চারটি আসন দুই-দুই করে কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল। এই দুইয়ের মধ্যে জঙ্গিপুর ও শামসেরগঞ্জ পড়েছিল সিপিএমের ভাগে। সূত্রের খবর, কংগ্রেস প্রথমে সিপিএমের জেতা ডোমকল আসন দাবি করেছিল। সেই জট কাটানোর পরে তারা আরএসপি-কে জেলায় কোনও আসন দিতে রাজি হয়নি। তখন সিপিএম নিজের ভাগ থেকে জঙ্গিপুর ছেড়ে দেয় আরএসপি-কে। এর পরে জট পেকেছে শামসেরগঞ্জ ঘিরেও।
জোট শিবির সূত্রের খবর, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে প্রদেশ সভাপতি জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস শামসেরগঞ্জের দাবি ছাড়তে চাইছে না। ফলে, সেখানে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হলে মেনে নিতে হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কংগ্রেস নেতৃত্বকে বলেছেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ জোটের পক্ষে ভাল লক্ষণ নয়। পুরুলিয়ায় ইতিমধ্যেই সেই সমস্যা হয়েছে। আর জেলা নেতৃত্বের দাবির কথা বললে সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটিও শান্তিপুর আসন ছাড়তে চায় না। জোটের ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জেতার পরে সেখানকার বিধায়ক দু’বার দল বদল করেছেন। এর পরেই এ দিন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনার পরে শামসেরগঞ্জে প্রার্থীর নাম ও শান্তিপুরে আসনের দাবির কথা বলে চাপ বাড়িয়ে রেখেছে সিপিএম।
নিজেদের জন্য থাকা কয়েকটি ফাঁকা আসনে প্রার্থী দেওয়া ছাড়াও বনগাঁ (দক্ষিণ) আসনে আগের প্রাথী প্রীতিকুমার রায়ের বদলে তাপস বিশ্বাসকে এ দিন প্রার্থী ঘোষণা করেছে সিপিএম। আগের প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে চর্চা হচ্ছিল। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অবশ্য জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে আগের ঘোষিত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি। এআইসিসি-ও এ দিন কালচিনি ও ফলতা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোটের জন্য এই দুই আসনে কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম ঘোষণা বাকি ছিল। পরবর্তী দফার ভোটের জন্য এ দিন স্ক্রিনিং কমিটির অনলাইন বৈঠক হলেও জোড়াসাঁকো, রাসবিহারীর মতো কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করতে পারেনি কংগ্রেস।