—ফাইল চিত্র।
রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি স্থির করার কথা। তার পরেও এলাকা সম্পর্কে বাহিনীর ভিন্ রাজ্যের জওয়ানদের পরিচিত করাতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর। গুগল ম্যাপ এবং তার সঙ্গে জিপিএস ব্যবহার করে কী ভাবে কোনও এলাকায় সহজে পৌঁছনো যায়, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নেতৃস্থানীয়দের।
কমিশনের খবর, রাজ্যে নতুন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে প্রথম দফার ভোটের আগেই রাজ্যে থাকবে ৭২৫ কোম্পানি আধাসেনা। তার মধ্যে ২১২ কোম্পানি সিআরপি, ১৪২ কোম্পানি বিএসএফ, ১১৩ কোম্পানি সিআইএসএফ, ১৩৭ কোম্পানি এসএসবি, আইটিবিপি ৭৯ এবং ৪৫ কোম্পানি আরপিএফ।
বুথ নিরাপত্তায় মোতায়েন আধাসেনার গতিবিধি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি), সেক্টর অফিস বা জেলা নির্বাচনী অফিসারের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে-সব জওয়ান থাকবেন, গোলমাল রুখতে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য রাজ্য পুলিশের স্থানীয় অফিসারেরা থাকবেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তা সত্ত্বেও গুগল ম্যাপ দেখে কোনও এলাকা চিহ্নিত করে জিপিএস ট্র্যাকিং-এর মাধ্যমে কী ভাবে সেখানে দ্রুত পৌঁছনো যায়, তা বোঝানোর কাজ চলছে বাহিনী-কর্তাদের। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, গোলমালের গতিপ্রকৃতি বুঝে দরকারে বাহিনী কালক্ষেপ না-করে যাতে নিজেরাই সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বিশেষ ভাবে ব্যবহার করারও ভাবনাচিন্তা চলছে কমিশনের অন্দরে। কারণ, ওই সব এলাকা সম্পর্কে বাহিনীর জওয়ানদের আগে থেকেই ধারণা থাকে। তাই সেই সব জায়গায় ভোট-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জওয়ানদের সুবিধা হবে।
রাজ্যে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে নির্বাচনী গোলমালের খবর আসতে শুরু করেছে। নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে হামলা হয়েছে, যা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের এমন প্রশিক্ষণ বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, এমনিতে এক-একটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রধান এবং রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসারকে নিয়ে সমন্বয় দল গড়া হয়েছে। সম্মিলিত ভাবে তাঁদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি স্থির হওয়ার কথা। এর উপরে প্রযুক্তির ব্যবহার আধাসেনার হাত আরও শক্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের সব বুথেই হাফ সেকশন (চার জন) করে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কোনও ভোটকেন্দ্রে চারটি পর্যন্ত বুথ থাকলে আট জন আধাসেনা দেওয়া হবে। বুথ সংখ্যা পাঁচ থেকে নয় হলে ১২ জন এবং তার বেশি সংখ্যক বুথের ক্ষেত্রে ১৬ জন আধাসেনা মোতায়েন হবেন। শুধু ঝাড়গ্রামের চারটি কেন্দ্রের ১৩০৭টি বুথে এক সেকশন (আট জন) করে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ওই জেলার প্রতিটি কেন্দ্রের সেক্টর অফিসে এক কোম্পানি আধাসেনা রাখা হবে। ভোটারদের লাইন দেখভালের জন্য হোমগার্ড, এনভিএফ বা রাজ্য পুলিশের কনস্টেবলদের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশকে ওই কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কুইক রেসপন্স টিম ছাড়াও সেক্টর অফিসে কমপক্ষে এক প্লাটুন কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।