বৃদ্ধকে বুথে নিয়ে যাচ্ছেন এক জওয়ান। কাঁথিতে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
বোমার বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল গ্রামের মানুষের। কানে এসেছিল আর্তনাদ। ভয়ে দরজায় খিল দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটান অঞ্জলি, কামদেবরা। তবে শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় বুথমুখী হয়েছেন আড়গোয়ালে সাতসতমালের বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কাঁথির মাজনায় ইভিএম নিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের পরে এ দিন পুলিশ বাড়িতে গিয়ে ডেকে এনেছে ভোটারদের।
শুক্রবার রাতে তৃণমূলের দু’জনকে এগরা নুরুভুঁইয়াচকে বিজেপি কর্মীরা আটকে রাখে বলে অভিযোগ। পাল্টা সাতসতমালে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিজেপির তিনজনকে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পটাশপুরের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় যায়। রাত ১১টা নাগাদ হেঁটে সাতসতমালে ঢোকার সময় তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।
বোমায় এক জওয়ানের দু’পা গুরুতর জখম হয়। সপ্লিটারে পটাশপুরের ওসি দীপককুমার চক্রবর্তীর মুখ ফেটে যায়। তাঁদের এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে জওয়ানকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ঘটনায় পটাশপুর থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করেছে। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
রাতের ওই ঘটনার পরে শঙ্কিত গ্রামবাসী। এ দিন সকাল পর্যন্ত রক্তে ভিজে ছিল মাটি। বোমার তীব্রতায় আশেপাশের গাছের ডালপাতা ছিঁড়ে পড়েছে। মিলেছে বোমার আধপোড়া অংশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তা দেখেই সাহস করে এ দিন সাতসতমাল বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের সামনে পড়েছিল লম্বালাইন।
এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী কড়া নিরাপত্তা। বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা অঞ্জলী বর বলেন, ‘‘রাতে আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরোতে পারিনি। জীবনে এমন অশান্তি গ্রামে হয়নি। পুলিশ ও আধাসেনা এসেছিল। তাদের আশ্বাসে ভোট দিয়েছি।’’
অন্যদিকে, দক্ষিণ কাঁথির মাজনা বিধানসভার ১৭২ নম্বর বুথে ইভিএমে কারচুপি করার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। স্থানীয়দের দাবি, তাঁরা তৃণমূলের চিহ্নে বোতাম টিপলেও ভোট যাচ্ছে বিজেপি’তে। এতেই মাজনা হাইমাদ্রাসার ওই বুথে ভিড় করেন শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা এবং তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। তাদের বিক্ষোভের জেরে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। বিক্ষোভকারীরা কাঁথি-মাজনা সড়কে টায়ার জ্বেলে বিক্ষোভও করেন। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময় কর বলেন, ‘‘ইভিএমে কারচুপি বিজেপি’র মস্তিকপ্রসূত।’’
কারচুপির অভিযোগের জেরে বহু ভোটারই বাড়ি চলে যান। কাঁথির এসডিপিও এবং আইসি এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার স্বপন তুং অবশ্য বলছেন, ‘‘ইভিএমে সমস্যা ছিল না। পুরোটাই গুজব। বিজেপি’র জেলা (কাঁথি) সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘হেরে যাওয়ার ফলে তৃণমূল ঝামেলা করছে।’’