বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বিমান বসু।
বাড়িতে বসে নয়, বুথে গিয়েই ভোট দিতে চান রাজ্য রাজনীতির দুই বর্ষীয়ান নেতা। একজন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অন্যজন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু। ঘটনাচক্রে, এই দুই বামপন্থী নেতাকেই কমিশন ও দল সিপিএমের পক্ষ থেকে বাড়িতে বসেই ভোটদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দুই নেতাই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। বিমানবাবু দীর্ঘ সময় ধরেই পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের সদর দফতর মুজফ্ফর আহমেদ ভবনের বাসিন্দা। স্বাভাবিক ভাবেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বর্ষীয়ান এই বাসিন্দা চৌরঙ্গি বিধানসভার ভোটার। তাঁর বুথ মুজফ্ফর আহমেদ ভবনের পাশেই কলকাতা পুরনিগমের অধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর বুদ্ধদেববাবু বালিগঞ্জের পাম এভিনিউয়ের বাড়িতেই থাকার সুবাদে তিনি বালিগঞ্জ বিধানসভার ভোটার। বুথ বালিগঞ্জ পাঠভবন স্কুলে। এতদিন তাঁরা সংশ্লিষ্ট বুথে গিয়েই ভোট দিয়ে এসেছেন।
কিন্তু গত বছর নভেম্বর মাসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শরীর অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল চিকিৎসকদের পক্ষে। তাঁদের পরামর্শেই ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড সমাবেশেও হাজির না হয়ে এক লিখিত বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি কমিশন ও সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে বুদ্ধদেববাবুর পাম এভিনিউয়ের বাড়িতে ভোটদানের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবে বলা হয়, কমিশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১২ডি ফর্মটি পূরণ করলে বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, বর্তমানে বুদ্ধদেববাবু আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। তাই দল ও কমিশনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই ভোট দিতে যাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
৭৭ বছর বয়সি নেতার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার খবরে উজ্জীবিত সিপিএম নেতৃত্ব। কারণ, রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব চেয়েছিল, অসুস্থতার কারণে বুদ্ধদেববাবু সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে না আসতে পারলেও, তিনি যেন প্রকাশ্যে এসে দলীয় কমরেড ও রাজ্যবাসীর কাছে নিজের উপস্থিতির জানান দেন। রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের কাছে এখনও বুদ্ধদাই আইকনিক লিডার। তিনি জনসমক্ষে এলেই পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হন। তাই যখন বুদ্ধদা নিজেই বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তাতে আর পার্টি পাল্টা কোনও প্রস্তাব দেয়নি।’’ আগামী ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফায় বালিগঞ্জে ভোট। ওইদিন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যকে সঙ্গী করে ভোট দিতে যেতে পারেন বুদ্ধদেব।
বুদ্ধদেববাবুর থেকেও বয়সে বড় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮০ বছর। কিন্তু এখনও সুস্থতার সঙ্গেই দলীয় সব কর্মসূচিতে অংশ নেন বিমান। বয়সের তুলনায় কম বয়সি সতীর্থদের হারিয়ে হাঁটতে পারেন মাইলের পর মাইল। জনসভা থেকে রোড শো সবতেই সপ্রতিভ উপস্থিতি বিমানের। তা সত্ত্বেও নিয়মনীতি মেনেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বাসস্থানে এসেই ভোট নেওয়ার প্রস্তাব এসেছিল কমিশনের পক্ষে। প্রস্তাব ফিরিয়ে বিমান বলেছেন, ‘‘প্রস্তাব এসেছিল ঠিকই। কিন্তু আমি ওদের জানিয়ে দিয়েছি, আই উইল গো টু দ্য বুথ।’’ অষ্টম দফায় ২৯ এপ্রিল ভোট চৌরঙ্গি বিধানসভায়। সেদিন বুথে গিয়েই ভোট দেবেন এই অশীতিপর রাজনীতিক।