সৌজন্য বিনিময়ে হিরণ চট্টোপাধ্যায় (উপরে) ও প্রদীপ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
ভোট মেটার পরে দিনকয়েক ভিন্ন কারণে শহরের বাইরে কাটিয়েছেন দু’জনেই। এখন ফলের অপেক্ষা। এ বার শহরে জনসংযোগে দেখা গেল বিজেপি-তৃণমূল যুযুধান দুই শিবিরের প্রার্থীদের। উপলক্ষ, তেলুগু নববর্ষ ‘উগাদি’!
আগামী মঙ্গলবার তেলুগু নববর্ষ ‘উগাদি’। তার আগে রবিবার ছিল ‘কত্তা আমাবস্যা’ পুজো। এই পুজো দিয়ে শুরু হয়ে যায় বর্ষবরণ। শহরের বিভিন্ন মাতামন্দিরে হয়েছিল পুজোর আয়োজন। সেখানেই ভিড় জমিয়েছিল তেলুগুরা। পরে দুপুরে বিভিন্ন তেলুগু বাড়িতে ছিল রসম, সম্বর, ওবাট্টু সহযোগে ভোজের আয়োজন। গত ১এপ্রিল নির্বাচনের পরে তেলুগুদের এই উৎসবে শামিল হতে ফের প্রার্থীদের দেখা গেল শহরের পথে। নির্বাচনের পরে কয়েকদিন পুরীতে কাটিয়ে শুক্রবারই ফিরেছন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। এ দিন তিনি সকাল থেকে খরিদা, ওল্ড সেটলমেন্ট-সহ বিভিন্ন মাতা মন্দিরে ঘোরেন। প্রদীপ বলেন, “আমি তো নতুন নয়। গত ছ’বছর ধরেই আমি তেলুগুদের নববর্ষ পালনে থাকি। তা ছাড়া আমার বাড়ির পাশেই মাতামন্দির হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই যোগাযোগ। সুতরাং ভোটকেন্দ্রিক নয়। এ বার বিজেপি প্রার্থীও ঘুরছেন। আমি চাই, ফল যা-ই হোক ২মে-র পরেও যেন উনি এভাবেই শহরের মানুষের পাশে থাকেন।” এ দিন সকালে কলকাতা থেকে খড়্গপুর শহরে আসেন বিজেপির তারকা প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। নির্বাচনের পরেই তিনি রাজ্যের নানা প্রান্তে সহযোদ্ধাদের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। হিরণও এ দিন শহরের খরিদা, মালঞ্চ-সহ একাধিক মাতা মন্দিরে গিয়ে জনসংযোগ করেন। হিরণের কথায়, “তেলুগু নববর্ষ আমার জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা। তবে আমি ভোটের রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের কাজ করে নিজের মনের কষ্ট দূর করতে এসেছি। আমি একটি দলের প্রতিনিধি হিসাবে এসেছি। কারও কথায় ২মের পরে থাকব এটা নিশ্চয়ই নয়। মানুষের জন্য এসেছি। মানুষ যা চাইবে সেটাই হবে।”
এ দিন হিরণ শহরে আসায় বিজেপির কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল যথেষ্ট। বিভিন্ন মাতা মন্দিরে হিরণ যেতেই নিজস্বী তুলতে দেখা যায় বহু তেলুগু জনজাতির মানুষকেও। দুপুরে নিমপুরা ১৩নম্বর ওয়ার্ডের বুথ প্রমুখ পি শরতের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন সারেন হিরণ। তাঁর কথায়, “এই রসম, সম্বর তো দীর্ঘদিন হায়দরাবাদে শ্যুটিংয়ে থাকাকালীন হোটেলে খেয়েছি। কিন্তু আজকের খাবারের মধ্যে সার্ভিস ট্যাক্স, জিএসটি নয়, ভালবাসা রয়েছে।” এর পরে খানিক বিশ্রামের পরে হিরণ যান দিন কয়েক আগে মৃত দুই গ্যাংম্যানের বাড়িতে। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। হিরণ বলেন, “রেলের দুর্ঘটনায় যিনি জখম হয়েছিলেন তিনি আমার বিধানসভার বাসিন্দা নয়। কিন্তু মানবিকতার জন্য আমি কলকাতায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছিলাম। সেই মানবিক কারণেই মৃত দু’জনের বাড়িতে এসেছি। এমনকি ডেবরার আরেক মৃতের বাড়িতেও আমার প্রতিনিধিকে পাঠাব।” এ দিন হিরণ যাওয়ার আগেই অবশ্য সেখানে গিয়ে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ। রেলের বিরুদ্ধে সুর চড়ান প্রদীপ। তিনি বলেন, “রেলের অপদার্থতার জন্য এই দুর্ঘটনা। আমি দুর্ঘটনার দিনই রেল হাসপাতালে জখমের পাশে ছিলাম। স্টেশনে যখন মৃতদেহ এসেছে তখনও ছিলাম। মাঝে পুরী গিয়েছিলাম বলে মৃতদের বাড়িতে যেতে পারিনি। এ বার শহরে ফিরে মৃত দু’জনের পরিবারের সঙ্গেই দেখা করলাম।”