অকুস্থল: টিটাগড়ে বোমা বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত সেই ক্লাবে তদন্তে বম্ব স্কোয়াডের এক কর্মী। বুধবার। ছবি: মাসুম আখতার।
অশান্তির আবহ জিইয়ে রেখেই আজ, বৃহস্পতিবার নির্বাচন হচ্ছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। ষষ্ঠ দফার এই নির্বাচনের আগে রক্তপাতও হল। বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হল এক জনের। মৃতের নাম রাজকিশোর যাদব। জখম হয়েছেন আরও এক জন।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে টিটাগড়ের জি সি রোডের খাটাল এলাকায় ওই ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণের জেরে একটি ক্লাব কার্যত উড়ে গিয়েছে। অভিযোগ, সেখানে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। স্থানীয়দের দাবি, ভোটের দিন অশান্তি ছড়াতেই ওই বোমা তৈরি হচ্ছিল। বুধবার ওই ঘটনায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, বোমা তৈরির সময়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় বিস্ফোরণ ঘটে। মৃত রাজকিশোর এবং জখম রাহুল যাদব নামে দুই যুবক ওই বোমা তৈরি করছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। যদিও বিস্ফোরণের আসল কারণ জানতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ বিস্ফোরণের শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লোকজন। কী ঘটেছে জানতে বাড়ির বাইরে লোকজন বেরিয়ে দেখেন, বিস্ফোরণের অভিঘাতে ক্লাবঘরটির চাল উড়ে গিয়েছে। তখনই রক্তাক্ত অবস্থায় দুই যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন বাসিন্দারা। এক জন অচৈতন্য, অন্য জন তখন যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। তাঁদের উদ্ধার করে ব্যারাকপুরের বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাজকিশোরকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। সঙ্কটজনক অবস্থায় অন্য জনকে কলকাতার এক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে রহড়া থানার পুলিশ দেখে, ওই ক্লাবে কৌটো-বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, “বিস্ফোরণ কী ভাবে ঘটেছে, তা জানতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও এক জন জখম।
তদন্ত চলছে।”
অন্য দিকে, বুধবার রাতেই খড়দহ এলাকায় স্থানীয় বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। ঘটনার পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রয়েছে দাবি করে রাতেই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অশান্তি ঠেকাতে পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও ভোটের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বোমা পড়া শুরু হয়েছে মঙ্গলবার রাত থেকেই।
ওই রাতেই টিটাগড় পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁধী মোড়ে তিনটি বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। একটি বোমা ফাটলেও অন্য দু’টি ফাটেনি। খড়দহ থানার পুলিশ বোমা দু’টি উদ্ধার করে। অভিযোগ, ওই রাতেই জগদ্দলের মেঘনা মোড়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় এবং কাঁচরাপাড়ার মনসাতলায় এক তৃণমূলকর্মীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। শ্যামনগরের কাউগাছির ক্ষুদিরাম কলোনি মোড়ের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি ক্যাম্প অফিসেও হামলা চলে। ঘটনার পরে জগদ্দলের তৃণমূল প্রার্থী সোমনাথ শ্যাম পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।