রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু পারিবারিক বন্ধু কাজল সিংহের স্মৃতি চারণ করলেন শীলভদ্র দত্ত।
এ বারের ভোটে আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, এটা ঠিক। কিন্তু সেই লড়াইয়ের প্রভাব ব্যক্তিগত সম্পর্কে পড়েনি। ব্যক্তিগত স্তরে আমরা একে অপরের বন্ধুই ছিলাম।
কাজলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই নেই করেও ৩০ বছরের বেশি ছাড়া কম নয়। রাজনীতি বাদ দিয়ে কাজলের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্কও ছিল। আমাদের সম্পর্ক রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিল। আমরা একসঙ্গে একই দল করেছি। যখন বিরোধী রাজনীতি করেছি, তখন পরস্পরের হাত ধরেই রাজনীতির পথে হেঁটেছি। এখন আমাদের দু’জনের রাজনীতির পথ আলাদা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তাতে বন্ধুত্বে বিচ্ছেদ আসেনি। পারিবারিক যোগ থেকেই গিয়েছে। তাই কাজলের এ ভাবে চলে যাওয়াটা আমার কাছে আপনজন হারানোর বেদনা। ওঁর প্রয়াণে আমি শোকস্তব্ধ।
কী বলব, কী বলব না ভেবে পাচ্ছি না। একটাই কথা মনে হচ্ছে বারবার, এতদিন একসঙ্গে ছিলাম। একসঙ্গে লড়েছি। এই প্রথমবার মুখোমুখি লড়াই হল। সেই ফলটা দেখে গেলি না কাজল! ফল যাই হোক না কেন, আমরা তো একসঙ্গেই থাকতাম।
বন্ধুত্ব নিয়েই এ বারের ভোটে আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। রাজনীতি করতে করতে আমরা শিখেছিলাম, রাজনীতি নীতির লড়াই। ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ব্যক্তি শত্রুতার কোনও জায়গা নেই এই ময়দানে। রাজনীতির লড়াই আলাদা, ব্যক্তিগত লড়াই অন্য। তাই পরস্পরকে সম্মান দিয়েই লড়াই করেছিলাম, নীতির যুদ্ধকে সামনে রেখে। এই প্রথম আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। আর ফলাফল ঘোষণার আগেই কাজল চলে গেল।
আমার পরিবারের এক সদস্যকে হারানোর যন্ত্রণা অনুভব করছি। খুব বেশি কিছু লেখার বা বলার জায়গায় আমি নেই। এটুকু বলব, ওঁর যাওয়ার সময় হয়নি। আমার আর কিছু বলার নেই। শুধু বলব, কাজল তুই যেখানেই থাকিস, ভাল থাকিস ভাই।