মহানাদ মোড়ে বিজেপি কর্মীদের টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। ছবি: সুশান্ত ঘোষ
উত্তরপাড়া
এখানকার বিজেপি প্রার্থী, তৃণমূলত্যাগী প্রবীর ঘোষালের বিরুদ্ধে কোন্নগর এবং উত্তরপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় নানা কুরুচিকর পোস্টার পড়ল সোমবার। প্রবীরবাবুকে প্রার্থী করার প্রতিবাদে তিনি দলত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভানেত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। তিনি নির্দল হয়ে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবারই তিনি দেওয়াল লেখা শুরু করে দেন। কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘যে দলে প্রবীর ঘোষালের মতো লোক থাকেন, সেই দল আর করব না। আমি নির্দল হয়ে ভোটে লড়ছি উত্তরপাড়ায়।’’ এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি প্রবীরবাবু। শুধু জানান, যা বলার দলীয় নেতৃত্ব বলবেন।
হরিপাল
প্রার্থী সমীরণ মিত্রকে বদলের দাবি উঠেছে হরিপালে। রবিবার তাঁর নাম ঘোষণার পরে একদফা বিক্ষোভ-অবরোধ করেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। একই দাবিতে সোমবারেও টায়ার জ্বালিয়ে হড়া বাজারেই এক ঘণ্টা অবরোধ করেন তাঁরা। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। তৃণমূলত্যাগী সমীরণবাবুকে হরিপালে প্রার্থী হিসেবে দলের কেউ মানতে পারছেন না জানিয়ে বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অশোককুমার ঘোষাল বলেন, ‘‘হরিপালে দলের জেতার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু প্রার্থী বদল না হলে ক্ষতি হবে।’’ সমীরণবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এটা সত্যি, বিজেপির হয়ে ওঁরা লড়াই করেছেন। আমি আশাবাদী, সকলের সঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে ফেলব।’’
শ্রীরামপুর
টিকিট না-পেয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপির আর এক প্রাক্তন জেলা সভাপতি, শ্রীরামপুরের ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ও কলকাতা উত্তর শহরতলির পর্যবেক্ষক। তিনি এ বার শ্রীরামপুর অথবা চাঁপদানিতে টিকিটের আশা করেছিলেন। দলের প্রার্থী-তালিকা ঘোষণার পর রবিবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দল ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। এর আগে তিনি দু’বার দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীরামপুরে এ বার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কবীরশঙ্কর বসু। চাঁপদানিতে দিলীপ সিংহ। ভাস্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘দু’জনই নবাগত। ২১ বছর দল করছি। দুঃসময়ে প্রার্থী হয়েছি। মার খেয়েছি। এখন দল ভুলে গেল?’’ পেশায় আইনজীবী এই নেতা দলবদলের চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানান।
চন্দননগর
এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে দীপাঞ্জন গুহকে। তিনি চুঁচুড়ার বাসিন্দা। পাশের শহরের লোক হলেও প্রার্থী হিসেবে তাঁকে মানতে পারছেন না চন্দনগরের বিজেপি নেতাকর্মীদের একাংশ। তাঁরা এলাকার মানুষকেই প্রার্থী হিসেবে চান। ওই দাবিতে সোমবার বিকেলে কয়েকশো বিজেপি কর্মী-সমর্থক মিছিল করে এসে শহরের বাগবাজার মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করেন।
সপ্তগ্রাম
এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। রবিবার এখানকার বাসিন্দা তথা চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে প্রার্থী করা হতে পারে, এই আশঙ্কাতেই সপ্তগ্রামের বিজেপি নেতাকর্মীরা পথে নেমে পড়লেন।
সোমবার দুপুরে মহানাদ এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখান। দেবব্রতর বিরুদ্ধে পোস্টার নিয়েও কিছু এলাকায় অবরোধ হয়। পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনের ইসলামপাড়ায় রেললাইনের উপর বসে আত্মহত্যার হুমকি দেন বিজেপি কর্মী নিরুপম মুখোপাধ্যায় এবং দলের এক নেত্রীও। যদিও ট্রেন আসার আগেই তাঁরা উঠে যান। সন্ধ্যায় চুঁচুড়ায় দলের জেলা কার্যালয়ে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। তাঁরা ভাঙচুরও চালান বলে অভিযোগ। এলাকার দীর্ঘদিনের নেতা রাজকমল পাঠককে প্রার্থী করার দাবি তোলেন মহানাদ অঞ্চলের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ।
এত দেবব্রত-বিরোধিতা কেন?
সপ্তগ্রামের বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলে থাকাকালীন দেবব্রতর বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং তাঁদের দলীয় কর্মীদের উপর হামলা-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় দলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দেবব্রতকে এখানে প্রার্থী করা হলে দলত্যাগের হুমকি দেন বিশ্বজিৎরা।
দেবব্রত তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘কেউ কেউ কুৎসা রটাচ্ছে। আমার নামে কোনও অভিযোগ নেই।’’ বিজেপির হুগলির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্ট্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রার্থী বাছাই করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যাঁদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে, আমারা দলগত ভাবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করে ফেলব।’’
উদয়নারায়ণপুর
প্রার্থী হিসেবে সুমিত কাঁড়ারের নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই রবিবার এখানে বিজেপি কর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সোমবার তাঁরা হেস্টিংসে দলের কার্যালয়ে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের
বক্তব্য, সুমিতবাবুর পরিবার নানা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েই সুমিতবাবু প্রার্থী হয়ে যান। এলাকার নেতা ভোলা
সামুইকে প্রার্থী করার দাবি ওঠে। ভোলাবাবু বলেন, ‘‘দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁকে মেনে নিতে আমি প্রস্তুত। কিন্তু কর্মীরা মানতে চাইছেন না। কাকে নিয়ে কাজ করব?’’
প্রার্থী সুমিতবাবুর আশ্বাস, সমস্যা মিটে যাবে।
পাঁচলা
এই সে দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন তৃণমূল নেতা। জানুয়ারি মাসের গোড়ায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই মোহিত ঘাঁটি বিজেপি প্রার্থী হতেই পাঁচলায় বিজেপির একাংশ অসন্তুষ্ট। তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রবিবারই ভাঙচুর হয় একাধিক দলীয়
কার্যালয়। সোমবার সেই বিক্ষোভ পৌঁছয় কলকাতায় দলের সদর
দফতর পর্যন্ত। বিক্ষোভে শামিল না হলেও ক্ষোভ গোপন করেননি ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী তথা দলের গ্রামীণ জেলা সহ-সভাপতি ভবানী রায়। তিনি বলেন, কে প্রার্থী হবেন, তা দলের ব্যাপার। আমি রবিবার থেকে বাড়ির বাইরে বেরোইনি। যে সব দলীয় কর্মী বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।